সংকটে টাঙ্গাইলের তাঁতশিল্প

টাঙ্গাইল জেলা ব্র্যান্ডিং তাঁতের শাড়ি বাঙালি রমণীদের প্রথম পছন্দ। ঈদ, পূজা ও বৈশাখ- এ তিনটি উৎসব তাঁত ব্যাবসায়ীদের সারা বছরের আয়ের উৎস। এই সময়ই তাঁতের শাড়ির কদর বাড়ে ও ব্যবহার হয়ে থাকে বেশি। 

বাহারী ডিজাইন আর নতুনত্ব নিয়ে প্রতিনিয়ত বাজারে আসে টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ী। কিন্তু এবারের চিত্রটা ভিন্ন। ক্রেতা না থাকায় তাদের উৎপাদিত কাপড়ের শো-রুম কিংবা কারখানায়ই পড়ে আছে। 

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কাপড় উৎপাদন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পুনরায় কিছুসংখ্যক তাঁতকল চালু করা সম্ভব হলেও, বেশিরভাগ কারখানা রয়েছে বন্ধ। টাঙ্গাইলে প্রায় ২৫ হাজার তাঁত মালিক রয়েছেন। আর তাঁতশ্রমিক রয়েছে প্রায় লক্ষাধিক। এসব কারখানা বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন তাঁত শ্রমিকরা ঝুঁকছে অন্য পেশায়।

যুগের সাথে তাল মিলিয়েই সুতার মান ও কাপড়ের নতুনত্ব ডিজাইন আনলে এই তাঁত শাড়ি পড়ার আগ্রহ বাড়ানো সম্ভব। শুধু কাপড়ই নয়, তার পাশাপাশি থান কাপড়, থ্রি-পিছ, লুঙ্গির কাপড় ও ওয়ান-পিছ কাপড় তৈরি করতে হবে। তাহলে শাড়ির চেয়ে এই কাপড়গুলো বেশি চাহিদা পাবে বলে মনে করেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আজহারুল ইসলাম।


টাঙ্গাইল শাড়ির রাজধানী হিসেবে খ্যাত দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল, চন্ডি, বেলতা, পুটিয়াজানি ও টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাজিতপুর ও কালিহাতী উপজেলার বল্লা, রামপুর, সিঙ্গাইর, বেহালাবাড়ী, মোমিননগর, দড়িখষিলা, কাজীবাড়ীর তাত প্রধান এলাকাগুলোয় দেখা যায় তাঁত শ্রমিকরা সব সময়ই প্রচণ্ড ব্যস্ত সময় করতো। কিন্তু এবছর টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প ব্যাপক হুমকির মুখে পরেছে। তাঁতের কাপড় বর্তমানে একেবারেই বিক্রি হচ্ছে না বলে জানান তাঁত মালিকরা। বিক্রি না থাকায় উৎপাদনেও লোকশান গুনতে হচ্ছে তাদের। এরকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিলুপ্ত হয়ে যাবে হাতে বোনা এ তাঁতশিল্প।

তাঁত মেশিন মালিক আশুতোষ বলেন, আমার ১৪ তাঁত মেশিনের মধ্যে বর্তমানে আটটি ধুঁকে ধুঁকে চলছে। কাপড়ের চাহিদা না থাকলেও কিছু তৈরি করে রাখছি। এভাবে হয়তো কিছুদিন চালাতো পারবো। বিক্রি না হলে কয়েকদিন পরেই তাঁত মেশিন বন্ধ করে দিবো।

তাঁত শ্রমিক চন্দন বাদ্যকর বলেন, আগের মতো তাঁত মেশিন চলছে না, সেই সাথে আগের মতো পারিশ্রমিকও পাচ্ছি না। আমাদের এখানে কয়েকটি মেশিন চলছে। বর্তমানে অনেক তাঁত শ্রমিকরা অটো সিএনজি চালাচ্ছে।

যগেষ্ণর অ্যান্ড কোং এর সত্ত্বাধিকারী ও তাঁত মালিক সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক জানান, কাপড়ের চাহিদা না থাকায় শাড়ি বুনতে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না তাঁত মালিকরা। এদিকে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন তাঁত শ্রমিকরা অন্য পেশায় চলে গেলে তাদের এ পেশায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। আমরা এ পেশায় তাঁত শ্রমিকদের ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট উৎসাহ দিচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, আমরা তাঁত ব্যবসায়ীরা বছরের ৯ মাস তাঁত চালাতে সক্ষম হই। বাকি তিনমাস সরকারিভাবে যদি এই তাঁতের শাড়ি মার্কেটিং করে ধরে রাখা চেষ্টা করে তাহলেই তাঁতীদের বাচিয়ে রাখা সম্ভব। সরকারি যে লোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাতে তাঁত শ্রমিকরা কাজ বাদ দিয়ে আরো অলস সময় পাড় করে। এতে তাঁতের শাড়ি রক্ষায় কোনো কাজে আসে না। এ অবস্থায় সরকারি উদ্যোগই পারে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে।

টাঙ্গাইল তাঁত বোর্ডের লিয়াজো অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে শুধু শাড়ি নয়, তার পাশাপাশি থ্রি-পিছ, পাঞ্জাবিসহ সিল্কের প্রচলিত কাপড় তৈরি করে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //