মেঘনায় লঞ্চে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, আটক ১

মেঘনা নদীতে শরিয়তপুর সুরেশ্বর থেকে চাঁদপুরগামী যাত্রীবাহী লঞ্চে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। দুটি স্পিড বোটে করে প্রায় ১৮ জনের একটি ডাকাত দল যাত্রীদের গলায় অস্ত্র ঠেকিয়ে স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ সমস্ত মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।

সোমবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল পৌনে দশটার দিকে শরীয়তপুর সখিপুর থানার মান্দারী এবং চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর কাছিঘাটা সীমান্ত এলাকা যাত্রীবাহী এমএল শাহ আলী-৪ লঞ্চে এই ঘটনা ঘটে। ডাকাতদলের হাত থেকে রেহায় পায়নি পুলিশের পোশাকপরিহিত লঞ্চযাত্রী নড়িয়া থানার ইনচার্য জয়নাল আবেদিন। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও নিয়ে যায়, ডাকাতদল।

এই ঘটনায় বিল্লাল হোসেন (৩৫) নামে ডাকাত দলের এক সদস্যকে লঞ্চযাত্রী কর্তৃক আটক করতে সক্ষম হয়েছে। আটক বিল্লাল ফরিদগঞ্জ উপজেলার খুররম খালি গ্রামের আব্বাস খানের ছেলে। তবে সে নড়িয়া ঘাটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাস্টাররুলের কর্মচারী বলে জানায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও মামুন হোসেন।

লঞ্চের মাস্টার হেলাল উদ্দিন জানায়, শরিয়তপুর জেলার সুরেশ্বর লঞ্চ ঘাট থেকে সকাল ৮টায় চাঁদপুরে উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে লঞ্চটি। সকাল ৯টায় নড়িয়া এলাকায় ঘাট ধরে। সেখান থেকে প্রায় ৫৫ জন যাত্রী নিয়ে রওনা দিলে ৯ টা ৪৫ মিনিটের দিকে সখিপুর মান্দরী ও চাঁদপুর সদরের কাচিঘাটা নদী সীমান্ত এলাকায় হঠাৎ দুটিস্পিডবোটে প্রায় ১৮ জনের একদল ডাকাট লঞ্চে উঠে। তারা আমাকে এবং কোয়াটার মাস্টার হালিমকে গলায় অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করে লঞ্চ থামাতে বাধ্য করে। এরপর যাত্রীদের টাকা পয়সা, স্বর্ণালংকার এবং সকল মালামাল নিয়ে যায়।

লঞ্চযাত্রী শরিয়তপুর নড়িয়া থানার উজ্জ্বল হোসেন (৫০) জানান, তারা দেশিয় অস্ত্র, রামদা, পিস্তল নিয়ে আমাদের গলায় ঠেকিয়ে আমার স্ত্রীসহ সকল যাত্রীর স্বর্ণালংকার, টাকা পয়সা নিয়ে যায়।

কুমিল্লা জেলাবাসী কলেজ শিক্ষার্থী সিমা আক্তার (১৮) জানায়, আমি নানা বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ছিলাম। আমার মা, ভাই, বোনসহ লঞ্চে ফেরার পথে এই ঘটনা ঘটে। ডাকাতদল হলুদ রঙের জ্যাকেট পরা ছিলো। তারা আমার ছোট ভাই জিহাদকে (৭) কোলে নিয়ে নদীতে ফেলে দেয়ার ভয় দেখায়। ভয়ে আমার মা এবং আমরা মোবাইল, টাকা, স্বর্ণালংকার যা কিছু ছিলো সব দিয়ে দিতে বাধ্য হয়।

লঞ্চ যাত্রী নিলুফা বেগম (৪৫), পান্না বেগম (২৪), সাথী বেগম (২৬), মাকসুদা বেগমসহ (৪০) অন্যান্য যাত্রীরা জানায়, ডাকাতদল লঞ্চের বেশ কয়েকজন পুরুষযাত্রীকে বেদম মারধর করেছে। আমরা এই পথে বহু বছর যাবত যাতায়াত করেছি। কিন্তু কখনো এ ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হয়নি। আজকের ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত এবং ভীত। আমরা আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে সন্দিহান। প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে, প্রতিটি লঞ্চে যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।

চাঁদপুর নৌ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম বলেন, শাহ আলী লঞ্চটি সকাল ১১টার দিকে চাঁদপুর ঘাটে এসে পৌঁছায়। পরে এসআই জয়নাল ডাকাত সদস্যকে থানায় হস্তান্তর করে। ডাকাতির ঘটনায় লঞ্চের ম্যানেজার আক্তার হোসেন মামলা করেছেন। আটক ডাকাত সদস্য থানা হেফাজতে রয়েছে।

নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) কামরুজ্জামান বলেন, লঞ্চে থাকা নৌ পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জয়নাল মো. বিল্লাল খান (৪৫) নামে ডাকাতকে আটক করতে সক্ষম হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং ডাকাতির সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, গত এক মাসে এটিসহ চাঁদপুর নৌ সীমানায় ৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে মতলবের মধ্যে চলাচলকারী দু’টি লঞ্চে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই দুই ডাকাতির ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ আটক হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়নি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //