শীতে কাঁপছে তিস্তা চরাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষ

লালমনিরহাট জেলা প্রায় হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় প্রতিবছর কার্তিক মাসের শেষ থেকেই শুরু হয় ঘন কুয়াশার সাথে হিমেল হাওয়া। এবারেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। 

আর দিন দিন বাড়ছে শীতের দাপট। এখন পৌষের শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীতে কাপছে তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষ। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। 

গত কয়েকদিন থেকে ঘন কুয়াশার সাথে বইছে হিমেল বাতাস। দিনের বেশিরভাগ সময় কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকে উত্তরাঞ্চল। কোনো কোনো দিন দেখা মিলে না সূর্যের। দিনের বেলায় সড়কে লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। থমকে দাড়িয়েছে উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের জনজীবন। ঠাণ্ডায় কাবু হয়ে পড়ছেন খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষজন। শীতের সকালে গ্রামের মানুষজন চায়ের কাপে উষ্ণতার খোঁজে ভিড় করছে স্থানীয় চায়ের দোকানে। 

এদিকে হরেক রকমের শীতবস্ত্রের পসরা নিয়ে বসেছে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। তবে এসব শীতবস্ত্রের দাম বেশি হওয়ায় কিনতে পারছে না নিম্নআয়ের মানুষরা। ব্যবসায়ীরা জানান, করোনাকালীন সময় হওয়ায় অনান্য বছরের মতো এবছর বাইরের দেশ থেকে পুরাতন শীতবস্ত্র না আসায় শীতবস্ত্রের দাম বেশি। লালমনিরহাট জেলা শহরের মিশন মোড়, রেলওয়ে স্টেশন, জজ কোর্ট, বিডিআর গেট এলাকায় বসেছে অর্ধশত অস্থায়ী দোকান। 


শীতবস্ত্রের অভাবে ঠাণ্ডার সাথে লড়াই করছে তিস্তা ও ধরলা নদীর চরাঞ্চলে বসবাসকারী দরিদ্র মানুষজন। কুয়াশা আর প্রচণ্ড ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে ঘর থেকে বের হয়ে মাঠে কাজ করছে খেটে খাওয়া মানুষজন। এসব শীতার্ত ছিন্নমুল ও দুঃস্থ মানুষজন খড়কুটোর আগুন জ্বালিয়ে ঠাণ্ডা নিবারণের চেষ্টা করছে। শীতে গবাদি পশু নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন গ্রামের মানুষ। বয়স্ক ও শিশুরা ঠান্ডায় বেশি কাবু হয়ে পড়েছেন। বেড়ে চলছে বৃদ্ধ ও শিশুদের ডায়রিয়া, নিউমোনিয়ায় ও হাপানি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। 

লালমনিরহাট সদর উপজেলার বত্রিশহাজারী গ্রামের দিনমজুর মনসুর আলী (৫৫) জানান, কনকনে ঠাণ্ডার কারণে তারা কাবু হয়ে পড়েছেন। খড়কুটো জড়ো করে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিয়েও ঠাণ্ডার প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা নদীর চর গোকুন্ডা এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম (৫৬) বলেন, নদী এলাকায় কনকনে ঠাণ্ডার সাথে হিমেল বাতাস বইছে। ঠাণ্ডার কারণে ঘর থেকে বেড় হতে পারছি না। জমিতে গিয়ে কাজ করাটা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় আমাদেরকে নিদারুণ কষ্টে শীত নিবারণ করতে হচ্ছে। 

জেলার আদিতমারী উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী মহিষখোঁচা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মতিয়ার রহমান মতি বলেন, চরাঞ্চলের সবাই ঠাণ্ডায় কাবু হয়ে পড়েছেন। তাদের প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র নেই। শীতার্ত মানুষ কম্বলের জন্য আমার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন। আমি মাত্র ২৫টি সরকারি কম্বল বরাদ্দ পেয়েছি। যেখানে চাহিদা দেড় হাজার। তিনি দ্রুত সরকারি ও বেসরকারিভাবে চরাঞ্চলের শীতার্ত মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র বিতরণের দাবি জানিয়েছেন।

তবে চেম্বার অব কমার্স, রোটারি ক্লাব অব লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন সংগঠন জেলার বিভিন্ন এলাকায় শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ শুরু করেছে। তবে সবার দাবি, যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে তা থেকে যেন দরিদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বঞ্চিত না হয়। 

লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় জানান, শীতের তীব্রতা বাড়ায় শিশু ও বয়স্কদের শীতজনিত রোগের ঝুঁকি বেড়েছে। সেই সাথে করোনাভাইরাসের ঝুঁকিও রয়েছে মারাত্মকভাবে। তাই হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর জন্য পৃথক ওয়ার্ড চালুর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, জেলার ৫ উপজেলায় দরিদ্র শীতার্ত মানুষের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪৮ হাজার কম্বল বিতরণ কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া জেলার জন্য আরো ৬০ হাজার শীতবস্ত্র বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ার সাথে সাথে শীতার্ত দুস্থদের মাঝে দ্রুত বিতরণ করা হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //