দ্বিতীয় তিস্তা ও ধরলা সেতু বদলে দিয়েছে উত্তরের ভাগ্য

উত্তরাঞ্চলের তিন জেলা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও রংপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পরিবর্তন এনেছে দ্বিতীয় তিস্তা ও ধরলা সেতু। উম্মোচিত হয়েছে পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলের সম্ভাবনার নতুন দ্বার। পাশাপশি অবস্থান হলেও ওই তিন জেলার আন্তঃযোগাযোগে বাধা ছিল তিস্তা ও ধরলা নদী। সেই বাধা কাটাতে ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তিস্তা নদীর উপর ৮৫০ মিটার দীর্ঘ লালমনিরহাটের কাকিনা ও রংপুরের মহিপুরে দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর উম্মোচন করেন। একই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাট জেলা শহরের সাথে ও কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ধরলা নদীর ওপর ২৯১ কোটি ৬৩ লাখ ২২৩ টাকা ব্যয়ে ৯৫০ মিটার দ্বিতীয় ধরলা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উম্মোচন করেন। গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। একই বছরে ধরলা নদী উপর নবনির্মিত দ্বিতীয় ধরলা সেতুটিরও উদ্বোধন করা হয়। 

সেতু দুইটি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ পুরো অঞ্চলের অর্ধকোটি মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক রুট বুড়িমারী স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা ও বিভাগীয় শহর রংপুরের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার কমিয়ে এনেছে। কম সময়ে ও কম খরচে কাঁচামালসহ কৃষিজাত পণ্য পরিবহন সম্ভব  হচ্ছে। এছাড়া অল্প সময়ের মধ্যেই রংপুর শহরের সঙ্গে লালমনিরহাটের আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার লোকজন যোগাযোগ করতে পারছেন। এর সুফল পাচ্ছে রংপুরের পিছিয়ে থাকা গঙ্গাচড়া উপজেলার মানুষও।

বুড়িমারী স্থলবন্দর ব্যবহারকারী মেসার্স সায়েদ এন্টারপ্রাইজ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও আমদানিকারক ব্যবসায়ী সায়েদুজ্জামান সাঈদ বলেন, কাকিনা-মহিপুর দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু চালুর ফলে বুড়িমারী-লালমনিরহাট-বড়বাড়ী হয়ে ঘুরে আর ঢাকা যেতে হচ্ছে না।

কলেজছাত্র মেহেরাজ ফাহিম বলেন, সেতুটি চালুর ফলে লালমনিরহাটের চারটি উপজেলার শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ রংপুরের উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনার সুযোগ পাচ্ছে।

দ্বিতীয় তিস্তা সেতু।

অপরদিকে, দ্বিতীয় ধরলা সেতু দিয়ে চলাচলের সুযোগ সৃষ্টির ফলে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সাথে লালমনিরহাট জেলা সদরসহ রংপুরের যোগাযোগের দূরত্ব কমে এসেছে ৩০ কিলোমিটার। এতে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট স্থলবন্দরের দূরত্ব কমে সৃষ্টি হয়েছে বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা। এছাড়া সেতুটি কুড়িগ্রামের তিন উপজেলার সাথে রাজধানী ঢাকা, রংপুর, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার কমিয়ে এসেছে। সেতুটি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ি ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের প্রায় ১০ লাখ মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করছে।

লালমনিরহাটের চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট শিল্পপতি শেখ আব্দুল হামিদ বলেন, সেতু দুটি পিছিয়ে থাকা রংপুর অঞ্চলের ইতিবাচক আর্থসামাজিক পরিবর্তনের সুযোগ এনেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান ও বাণিজ্য সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //