চেলা খালে তিন কোটি টাকার অপ্রয়োজনীয় সেতু

চেলা খাল, খালের উপর সেতুর একপাশে সড়ক ও অন্যপাশে ধানের জমি। খালের দক্ষিণে আনুজানি গ্রাম, উত্তরে ধানি জমি ও চেরা বিল। বিলের পাড়ে মইনপুর ও কুরশি গ্রাম।

তবু খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে সেতু। সেতুর অপর প্রান্তে কোনো সড়ক নেই। সংযোগ সড়কের পরই জমি। আলপথ ছাড়া সড়কের কোনো অস্তিত্ব নেই সেখানে।

ফলে কোনো সড়ক না থাকায় সেতুটি কোনো কাজে আসছে না। কিন্তু এই সেতু নির্মাণ ব্যয় তিন কোটি টাকা। সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে এক বছর আগে। সম্প্রতি এই সেতু নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। 

এলাকার বাসিন্দাদের এক পক্ষ বলছে,এখানে সেতুর কোনো প্রয়োজন ছিল না। এদিকে কোনো সড়ক নেই। অন্য পক্ষের দাবি, সড়ক হলে দুটি গ্রামের মানুষের উপকারে আসবে সেতুটি।

আনুজানি গ্রামের মো. আমজাদ আলী বলেন, ‘ইলা সুন্দর ব্রিজ আমরার এলাকাত আর নাই। অখন রাস্তা দরকার। রাস্তা অইলেই মানুষ চলাচল করত পারব। রাস্তার মাপজোক নেয়া অইছে। এখন মানুষ হাওর থাকি ব্রিজের ওপর দিয়া বাড়িত ধান আনে।’

সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার ভাতগাঁও ইউনিয়নের আনুজানি গ্রামের পাশের চেলাখালের ওপর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) এই সেতুর অবস্থান।

এলাকাবাসী জানান, সেতুর পাশে একটি গ্রাম আছে। বর্ষাকালে যদি সেই গ্রামে যাওয়া-আসা যায় না তাহলে সেতুর কোনো মূল্য নাই। রাস্তা নির্মাণ করলে ব্রিজটি মানুষের কাজে আসবে। মইনপুর ও কুরশি গ্রামের মানুষও ওই দিকে যাতায়াত করা যাবে। আমাদের দাবি দ্রুত রাস্তা করা হোক।

সরেজমিন দেখা গেছে, ছাতক উপজেলার জালালপুর থেকে আনুজানি হয়ে একটি সড়ক গেছে আলীগঞ্জ বাজারে। আনুজানি গ্রামের পাশেই চেলা খাল। খালের দক্ষিণে আনুজানি গ্রাম, উত্তরে ধানি জমি ও চেরা বিল। বিলের পাড়ে মইনপুর ও কুরশি গ্রাম। চেলা খালের ওপর এই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয় তিন বছর আগে। গ্রামের পাশের সড়ক যুক্ত করে সেতুটি খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৬ মিটার, প্রস্থ সাড়ে ৭ মিটার। এদিকে সেতুটি তুলনামূলক নিচু হওয়ায় ভরা বর্ষায় নৌ চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়।

আনুজানি গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মইনপুর ও কুরশি ছাড়াও খালের উত্তর পাড়ের আরো কয়েকটি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য এই সেতু নির্মাণে করা হয়েছে। 

জানা যায়, সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আনুজানি গ্রামের বাসিন্দা বিচারপতি মো. ইমান আলী, এলজিইডি ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠানে সেতুর উত্তর পাড়ের মইনপুর ও কুরশি গ্রামে সংযোগের জন্য সড়ক নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

ভাতগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য আবদুন নূর বলেন, সেতুর উত্তর পাড় থেকে দুটি গ্রামে যাতায়াতের জন্য সড়ক নির্মাণ করতে হবে। সড়ক না হলে সেতু কোনো কাজে আসবে না।

আগে সেতু হওয়ায় পরে সড়কের কাজ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত করা হয়েছে। অনেকস্থানে এ রকম হয় দেখা গেছে বলে জানান এলজিইডির ছাতক উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবুল মনসুর মিয়া। 

তিনি জানান, সেতুটির উত্তর পাশে সড়ক নির্মাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রকল্প প্রস্তাব প্রস্তুত করছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //