মসজিদে বিস্ফোরণ

মসজিদে বিস্ফোরণ: ২৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মসজিদ কমিটির সভাপতিসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জের আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় বলে জানিয়েছেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার জিসানুল হক।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আরো আটজনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করার প্রস্তুতি চলছে। তারা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হওয়ায় প্রয়োজনীয় অনুমতি সাপেক্ষে চার্জশিট দাখিল করা হবে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সঠিকভাবে মসজিদ পরিচলনায় কমিটির অবহেলা, অব্যবস্থাপনা, উদাসীনতা, সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করা, কারিগরি দিক বিবেচনা না করে অবৈধভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া, গ্যাসের উপস্থিতি জানার পরও তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা না নেয়া, মসজিদের ভেতরে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি স্থাপন, তিতাসের কর্মীদের দায়িত্বে অবহেলা, গ্যাস লাইন তদারকি না করা, পাইপের ছিদ্র মেরামত না করা, ঝুঁকিপূর্ণভাবে গ্যাস লাইন স্থানান্তরের কারণে ওই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানি ঘটে বলে সিআইডির তদন্তে সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে।

যে ২৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে, তারা হলেন- আব্দুল গফুর মিয়া (৬০), শামসুদ্দিন সর্দার (৬০), সামসু সরদার (৫৭), শওকত আলী (৫০), অসীম উদ্দিন (৫০), জাহাঙ্গীর আলম (৪০), শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল (৪৫), নাঈম সরদার (২৭), তানভির আহমেদ (৪৫), আল-আমিন (৩৫), আলমগীর সিকদার (৩৫), মাওলানা আল আমিন (৪৫), সিরাজ হাওলাদার (৫৫), নেওয়াজ মিয়া (৫৫), নাজির হোসেন (৫৬) আবুল কাশেম (৪৫), আব্দুল মালেক (৫৫), মো. মনিরুল (৫৫), স্বপন মিয়া (৩৮) আসলাম আলী (৪২), আলী আজম (মিল্কি) (৫৫), মো. কাইয়ুম (৩৮), মামুন মিয়া (৩৮), দেলোয়ার হোসেন, বশির আহমেদ হৃদয় (২৮), মোহাম্মদ রিয়েল (৩২), আরিফুর রহমান (৩০), মোবারক হোসেন (৪০) এবং রায়হানুল ইসলাম (৩৬)।

বাকি যে আটজনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়ার জন্য সিআইডি সরকারের অনুমতি চেয়েছে, তারা হলেন- মো. সিরাজুল ইসলাম, মাহমুদুর রহমান রাব্বি, মানিক মিয়া, এসে এম হাসান শাহরিয়ার, মো. মনিবুর রহমান চৌধুরী, মো. আইয়ুব আলী, মো. ইসমাইল প্রধান এবং মো. হানিফ মিয়া।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন আহমেদ জানান, অভিযোগপত্রের ২৯ জনের মধ্যে চারজন এবং পরের ৮ জনের সবাই গ্রেফতার হয়েছিলেন। ১২ জনের সবাই এখন জামিনে আছেন।

গত ৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে এশার নামাজ চলাকালে পশ্চিম তল্লার ওই মসজিদে হঠাৎ বিকট বিস্ফোরণ ঘটে। ওই সময় নামাজে যাওয়া ৩৭ জনের পাশাপাশি বাইরে থাকা একজন পথচারী ওই ঘটনায় দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে ৩৪ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন চারজন।

সেই রাতে প্রাথমিকভাবে মসজিদের ছয়টি এসি একসঙ্গে বিস্ফোরিত হওয়ার কথা বলা হলেও পরে গ্যাস জমে দুর্ঘটনা ঘটার কথা বলেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ পরদিন তিতাস, ডিপিডিসি, মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে ‘অবহেলাজনিত মুত্যু সংঘটনের’ অভিযোগ এনে মামলা করে, যার তদন্তভার পরে সিআইডির হাতে যায়।

বিস্ফোরণের কারণ খতিয়ে দেখতে পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ফায়ার সার্ভিস, জেলা প্রশাসন, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি, সিটি করপোরেশন।

তিতাসের পক্ষ থেকে দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮৭ সালে স্থাপন করা একটি লাইনের বদলে ১৯৯৮ সালে নতুন লাইনের সংযোগ পান কয়েকজন গ্রাহক। গ্রাহকের বাড়ির সামনে থেকে পুরোনো সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও তখন সড়কের মূল লাইন থেকে তা বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। পরে পরিত্যক্ত ওই লাইনের ওপর নির্মাণ করা হয় মসজিদ। মাটির নিচে চাপা দিয়ে রাখা গ্যাস রাইজার এবং মসজিদ নির্মাণের সময় ক্ষতিগ্রস্ত পুরনো বিতরণ লাইন থেকে গ্যাস বের হচ্ছিল। সেই গ্যাস মসজিদের বেইজমেন্ট ভেদ করে ভেতরে গিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে জমা হয়। মসজিদে একাধিক বিদ্যুৎ সংযোগের মধ্যে একটি সংযোগ ছিল অবৈধ। সেই রাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর মুয়াজ্জিন যখন এক ফেইজ থেকে আরেক ফেইজে লাইন ‘চেইঞ্জওভার’ করেন, তখন ‘স্পার্ক’ থেকে মসজিদের নিচতলায় জমা গ্যাসে আগুন ধরে যায়।

মসজিদের পাশের সড়কের মাটি খুঁড়ে পরিত্যক্ত পাইপলাইনে ছয়টি ছিদ্র পাওয়ার পর সেগুলো বন্ধ করে তিতাস কর্তৃপক্ষ। তিতাসের ফতুল্লা জোনের চার কর্মকর্তাসহ আটজনকে গ্রেফতার করে সিআইডি, পরে তাদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এছাড়া ডিপিডিসির একজন মিটার রিডার এবং দুই ইলেক্ট্রিশিয়ানকেও গ্রেফতার করা হয়। ইলেক্ট্রিশিয়ান মোবারক ও রায়হান আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে ওই মসজিদে অবৈধ সংযোগ দেয়ার কথা স্বীকার করেন।   

তদন্তে মসজিদের পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার তথ্য পাওয়ার পর কমিটির সভাপতি আবদুল গফুর মিয়াকেও গ্রেফতার করে সিআইডি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //