‘অবৈধ সম্পর্কের’ বলি রেহেনা, মাফলারে খুললো হত্যার রহস্য!

অবশেষে রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া এলাকায় থেকে উদ্ধার করা নারীর অর্ধগলিত লাশের পরিচয় মিলেছে। একইসাথে এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ঘাতক ট্রাকচালককেও। 

হত্যাকাণ্ডের শিকার রেহেনা পারভীন (৩৭) চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ইছাপুর এলাকার প্রবাসী জনৈক সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী। হত্যার ঘটনায় আটক ঘাতক ট্রাকচালক আবুল খায়ের (৪৯) চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের সোনারগাঁও রাস্তার মাথা এলাকার মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদ উল্লাহ জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘাগড়া থেকে লাশ উদ্ধারের পরপরই আমরা ঘটনার তদন্তে নেমে পড়ি। অবশেষে মৃতদেহে মোঁড়ানো মাফলার ও পারিবারের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘাতক ট্রাকচালক আবুল খায়েরকে গতকাল শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) রাতে আটক করতে সক্ষম হই। পরে থানা পুলিশের একটি টিম রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর এলাকা থেকে আবুল খায়েরকে কাউখালী থানায় নিয়ে আসে। 

তিনি জানান, রেহেনার ছেলে মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় গ্রেফতার আবুল খায়েরকে চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

 এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া এলাকা থেকে অর্ধগলিত অজ্ঞাত পরিচয়ের এই নারীর লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ঘাগড়া পুলিশ ফাঁড়ি থেকে প্রায় দুইশ’ গজ পশ্চিমে এই লাশটি পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা লাশটি দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে। পরে সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম থেকে আসা এক সন্তান মৃতদেহটি তার মায়ের বলেই শনাক্ত করে।

হত্যাকারী আবুল খায়েরের বরাত দিয়ে থানা পুলিশ জানিয়েছে, হত্যার শিকার রেহেনার সাথে তার প্রবাসী স্বামীর গত আট বছর ধরে যোগাযোগ নেই। এই নারীর ছেলে কিছুদিন ট্রাকের হেলপার হিসেবে ছিলেন। সেই সুবাদে রেহেনার সাথে ট্রাকচালকের পারিবারিকভাবে সখ্যতা গড়ে উঠে। স্বামী প্রবাসে থাকা ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার সুবাধে তাদের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতো আবুল খায়ের। এছাড়া পরিবারের ঘরভাড়াসহ আনুষঙ্গিক সব খরচ বহন করত আবুল খায়ের। এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার রেহেনার বাসায় গিয়ে অন্য পুরুষের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে বিষয়টি মেনে নিতে পারছিলেন না আবুল খায়ের। পরিকল্পনা করে তাকে হত্যা করার। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১ জানুয়ারি ঢাকা থেকে ট্রাকযোগে কয়লা নিয়ে রাঙ্গুনিয়ার মগাছড়ির ইটের ভাটাতে আসার সময় রেহেনাকে ফোন করে টাকা দেয়ার কথা বলে ডেকে নেয় খায়ের। পরে রেহেনাকে ট্রাকের কেবিনে রাঙামাটির পযটন রিসোর্টে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সে। সেদিন রাতে পথিমধ্যে ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এসে ট্রাক থামিয়ে রেহেনাকে মাফলার দিয়ে পেছিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ট্রাকে থাকা কাপড় দিয়ে ঢেকে কেবিনের মধ্যে লুকিয়ে রাখে সে। পরে ট্রাকে থাকা কয়লা ইটের ভাটায় আনলোড করে গভীর রাতে ঘাগড়াস্থ পুলিশ ফাঁড়ি থেকে প্রায় ২০০ গজ পশ্চিমে রেহেনার লাশটি ফেলে যায় খায়ের।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিকাশের টাকা তুলে মেয়ের ওষুধ আনতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার এক সপ্তাহ পর বৃহস্পতিবার দুপুরে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয় রেহেনা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিহতের ছেলে মাহমুদুল রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল মর্গে এসে তার মায়ের লাশ শনাক্ত করেন ও ঘটনার বিস্তারিত জানান।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //