সব নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হবে: নৌ প্রতিমন্ত্রী

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, শুধু রাজধানী নয়, পর্যায়ক্রমে দেশের সব নদী অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করা হবে।

তিনি বলেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে নদীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান চলছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব নদীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। 

তিনি আরো বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন নদীর ৬০ হাজার অবৈধ দখলদার রয়েছে। তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে ২০ হাজার অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) বরিশাল সার্কিট হাউজে বিআইডব্লিউটিএ আয়োজিত ‘বরিশাল বিভাগের নদীসমূহের নাব্যতা বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা হ্রাস, জলাভূমি বাস্তু পুনরুদ্ধার, সেচ ও ল্যান্ডিং সুবিধাদি বৃদ্ধি করে নদী ব্যবস্থাপনার সম্ভাব্যতা যাচাই’ শীর্ষক সমীক্ষা কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পরিবহনের প্রধান মাধ্যম নৌপথ। মোংলা বন্দরের ব্যবহার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি ও পায়রা বন্দরের উন্নয়নের কারণে এ অঞ্চলটির নৌপথ ব্যবহারে নদীসমূহের গুরুত্ব অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বরিশাল বিভাগের ৩১টি নৌপথের নাব্যতা ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধি করে টেকসই ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে।

তিনি বলেন, দখলদারদের কাছ থেকে নদী দখলমুক্ত করতে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। নদী না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। তাই দখলদারদের স্বেচ্ছায় সম্মানের সাথে নদীর দখল ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। এই আহ্বানে সাড়া না দিলে নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন হলে দেশের দ্বিতীয় নদীবন্দর বরিশালের সাথে নৌপথে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন ব্যবস্থা সাশ্রয়ী, জনবান্ধব ও নিরাপদ হবে। জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা দেশ অর্জন করেছি আর দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নসহ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করবো। পদ্মাসেতু নিয়ে দেশি-বিদেশি অনেক ব্যক্তি ষডযন্ত্র করেছে। কিন্তু সব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ’৭৫ পরবর্তী কোনো সরকার নৌপথ উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখেনি। এই সরকার নৌপথ উন্নয়নে নির্বাচনি ইশতেহারে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খনন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২ হাজার ২০০ কিলোমিটার নৌপথ খনন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আমলে সাতটি ড্রেজার সংগ্রহের পর কোনো সরকার নৌপথ খননে ড্রেজার সংগ্রহ করেনি। দেশরত্ন শেখ হাসিনার সরকার এ পর্যন্ত ৩৮টি ড্রেজার সংগ্রহ করেছে ও আরো ৩৫টি ড্রেজার সংগ্রহের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ফলে ৮০টি ড্রেজার বিআইডব্লিউটিএ’র বহরে যুক্ত হয়ে নৌপথ উন্নয়নে কাজ করবে।

সরকারের নির্দেশনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ‘বরিশাল বিভাগের নদীসমূহের নাব্যতা বৃদ্ধি, ন্যূনতম জলাবদ্ধতা, জলাভূমি বাস্তু পুনরুদ্ধার, সেচ ও ল্যান্ডিং সুবিধা বৃদ্ধি করে টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস’ (সিইজিআইএস) এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা পরিচালনা করেছে।

বরিশাল বিভাগের ৩১টি নৌপথ উন্নয়নের বিবেচনা করা হয়েছে। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১,৪৭৫ কিলোমিটার। ৩১টি নৌপথের মধ্যে মাত্র চারটি নৌপথে পর্যাপ্ত গভীরতা থাকায় ড্রেজিং কার্যক্রমের আপাতত প্রয়োজন নেই। অবশিষ্ট নৌপথে খননের প্রস্তাবনা করা হয়েছে; যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৭০ কিলোমিটার ও এর ক্যাপিটাল ড্রেজিং পরিমাণ প্রায় ৪২ মিলিয়ন ঘনমিটার। পরবর্তীতে নৌপথসমূহে নাব্যতা বজায় রাখার জন্য ৭ বছর সংরক্ষণ ড্রেজিংয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে যার পরিমাণ হবে প্রায় ১৭০ মিলিয়ন ঘনমিটার।

নতুন ঘাট ও বিদ্যমান ঘাট উন্নয়নের জন্য গৃহীত পরিকল্পনায় তিনটি নতুন লঞ্চঘাট নির্মাণ, ৬০টি লঞ্চঘাট, ১১টি কার্গোঘাট, ৩৮টি খেয়াঘাট উন্নয়ন ও তিনটি ঘাট পর্যটনের উন্নয়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।

বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার ড. অমিতাভ সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক, বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম তালুকদার, বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার ও পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন, বরিশাল সদরের উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান, বাপার মো. রফিকুল ইসলাম, বরিশাল প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও উপ-পুলিশ কমিশনার আকরাম হোসেন। -বাসস

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //