খুলনায় করোনার টিকা প্রদান শুরু ৭ ফেব্রুয়ারি

আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে খুলনায় প্রথম ধাপে করোনার টিকা দেয়া শুরু হবে। প্রথম ধাপে খুলনা মহানগরীর সদর হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, পুলিশ হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল, বিজিবি হাসপাতাল, তালতলা হাসপাতাল ও লাল হাসপাতালে করোনার টিকা দেয়া হবে। আর উপজেলা পর্যায়ে স্ব স্ব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ টিকা দেয়া হবে।

নগরের টিকাদান কর্মসূচি কার্যক্রম পরিচালনা করবে খুলনা সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশনের মেয়রকে সভাপতি ও একই সংস্থার চিফ মেডিক্যাল অফিসারকে সদস্য সচিব করে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) সভাপতি ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ওই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), পৌরসভার মেয়র (পৌরসভা থাকলে), উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, আইসিটি অধিদফতরের সহকারী প্রোগ্রামার, দুইজন গণ্যমান্য ব্যক্তি (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোনীত), স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করে এমন দুটি এনজিও’র প্রতিনিধি (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোনীত)।

রবিবার খুলনায় প্রথম ধাপে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক ১৬ হাজার ৮০০ টিকা আসছে। এতে ১ লাখ ৬৮ হাজার ডোজ রয়েছে, যা ৯৭ হাজার ২৩০ জন মানুষকে দেয়া সম্ভব হবে। টিকা সংরক্ষণে ৩০টি হিমায়িত বাক্স, ১৭টি টিকাদান কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। টিকা দেয়ার জন্য ১৩২ জন কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি টিকাদানকারী টিমে দুই জন টিকা প্রয়োগকারী ও চার জন স্বেচ্ছাসেবী থাকবে। টিকাদান কর্মসূচি কার্যক্রম পরিচালনায় জেলা, সিটি করপোরেশন ও উপজেলা পর্যায়ে পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে। টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভীতি দূর করতে ও সাধারণ মানুষের আতঙ্ক কাটাতে খুলনায় প্রথম টিকা নিতে চান সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রথম ধাপে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক ১৬ হাজার ৮০০ টিকা রবিবার দুপুর ১টার মধ্যে খুলনায় পৌঁছাবে। নগরীর স্কুল হেলথ ক্লিনিকে টিকা বুঝে নিবেন সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ। টিকা সংরক্ষণের জন্য ৩০টি হিমায়িত বাক্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে স্কুল হেলথ ক্লিনিকে ১৩টি ও ৯টি উপজেলায় ১৭টি আইএলআরে টিকা সংরক্ষণ করা হবে। প্রতিটিতে ৭ হাজার করে ভ্যাকসিন (টিকা) রাখা যাবে।

খুলনার সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, খুলনায় করোনা ভাইরাসের টিকা সংরক্ষণ, কেন্দ্র নির্ধারণ, কর্মীদের প্রশিক্ষণসহ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। টিকাগুলো রবিবার দুপুরে খুলনায় পৌঁছাবে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকা দেয়া শুরু হবে।

তিনি বলেন, টিকা গ্রহণ করতে সিভিল সার্জনকে সভাপতি করে ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, টিকা নেয়ার জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী একটি কার্ডের নমুনা স্ব স্ব ব্যক্তির মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে চলে যাবে। সেটা প্রিন্ট করে নিয়ে গেলেই টিকা নিতে পারবে।

তিনি আরো বলেন, প্রথম ধাপে টিকা নেয়ার পর ৮ সপ্তাহ পরে আবার দ্বিতীয় ধাপে তাদের টিকা নিতে হবে বলেও জানান সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা জানান, প্রথম ধাপের টিকা প্রদান করার জন্য সিভিল সার্জনের নির্দেশে খুলনা জেলায় ৯৭ হাজার ২৩০ জন সম্মুখ সারির জনগোষ্ঠীর চাহিদা পাঠানো হয়েছে। ডা. ঊষা বলেন, এই টিকা দুই ডোজে নিতে হবে, ৪ থেকে ১২ সপ্তাহের ব্যবধানে।

টিকা দেয়ার পর কারও কারও মধ্যে মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। টিকা দেয়ার স্থানে ব্যথা, সামান্য ফুলে যাওয়া, শরীর ম্যাজম্যাজ, কাঁপুনি, জ্বর জ্বর ভাব, ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যা স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।

করোনার টিকা দেয়ার পর যথেষ্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠতে খানিকটা সময় লাগতে পারে। তাই টিকা দেয়ার পরও করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা উচিৎ বলে মনে করেন সিভিল সার্জন অফিসের এই মেডিকেল অফিসার। যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলেই স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল টিমের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

ডা. শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা আরো বলেন, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভীতি দূর করতে ও সাধারণ মানুষের আতঙ্ক কাটাতে খুলনায় প্রথম টিকা নিতে চান তিনি। একজন চিকিৎসককে টিকা নিতে দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকটা ভীতি দূর হবে বলেও জানান এই মেডিকেল অফিসার। তবে প্রথম টিকা দেয়ার ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ।

উল্লেখ্য ,করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রথম ধাপে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ৪৯ কার্টুনে ৫ লাখ ৮৮ হাজার ডোজ টিকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //