ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: প্রধান ফটকের রাস্তা যেন মরণফাঁদ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক হতে পাশ্ববর্তী শেখপাড়া বাজার পর্যন্ত আধা কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশা। বিকল্প রাস্তা না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পারাপার হতে হয় শিক্ষার্থীদের। রাস্তার ভগ্ন দশার কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও রাস্তার দুই পাশে থাকা স্পিড বেকারের অবস্থাও নাজুক।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তাটিতে ছোটবড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ রাস্তায় যশোর বেনাপোল হতে দিনে-রাতে প্রায় কয়েক হাজার মালবাহী ট্রাক চলাচল করে। এছাড়া যাত্রীবাহী বাসের চাপও কম নয়। এতে দিন দিন এই সড়কের অবস্থা আরো নাজুক হচ্ছে। রাস্তার এই ভগ্ন দশার পাশাপাশি ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অতিরিক্ত ধুলাবালিতে শিক্ষার্থীদের শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ রোগও দেখা দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি যাত্রী ও এলাকাবাসীরাও এ দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন। এছাড়াও রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা হোটেল ও দোকানগুলো ধুলায় নিমজ্জ্বিত হয়ে যায়। অতিরিক্ত ধুলাবালি খাদ্যের সাথে মিশ্রিত হচ্ছে। এদিকে, ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীদের এ খাবার খেতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান মেডিকেল অফিসার ড. এস এম নজরুল ইসলাম সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, ‘অতিরিক্ত ধুলাবালির কারণে শ্বাসকষ্টের প্রদাহ সহ চর্মরোগ ও চোখের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও রাস্তার পাশে থাকা ধুলাবালি যুক্ত খাবার খেলে ফুড পয়জানি হতে পারে। যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।’

ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার মো: সুমন আলী সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, ‘গত মাসে ঝিনাইদহ মহাসড়কে পাঁচটি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন। চালকের অসর্তকতা আর রাস্তার বেহাল দশার কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে বলেও জানান তিনি।’ 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শামিম আহমেদ শুভ নামের এক শিক্ষার্থী সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, ‘প্রায় ১ বছর ধরে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই মহাসড়কে বাস ও ট্রাক নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে চলাচল করে। তাই দুর্ঘটনা শঙ্কা নিয়ে সবসময় ক্যাম্পাস ও বাজারে যেতে হয়। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে যে স্পিড বেকার ছিলো সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে গাড়ি চালকরা বেপরোয়া ভাবে রাস্তাটি অতিক্রম করে। কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়গুলোর দ্রুত সমাধানের আহ্বানও জানান তিনি।

এলাকাবাসী সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন,‘ দীর্ঘদিন ধরে আধা কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশায় আমরা অতিষ্ঠ। এই আধা কিলোমিটার রাস্তায় কয়েকদিন পর পর দুর্ঘটনা ঘটে। যে কোন সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এমনিতেই এই মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা নিত্যনৈমত্ত্যিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই দুর্ঘটনা ঘটার আগেই রাস্তা মেরামত জরুরি।’

সড়কে নিয়মিত ট্রাক চালক আব্দুস সাত্তার সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, ‘রাস্তার এই বেহাল দশায় প্রতিনিয়ত ট্রাকের টায়ার বিস্ফোরিত হয়। এছাড়াও চাকার স্কেলও ভেঙে যায়। টায়ার বিস্ফোরিত হলে নিজেদের দুর্ঘটনার সাথে পথচারীদেরও দুর্ঘটনা আশঙ্কা থাকে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে রাস্তা মেরামতের জোর দাবি জানাই।’

ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউল হায়দার সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, ‘ এই রাস্তাটি সংস্কার কাজের জন্য আমরা নতুন প্রকল্পের পদক্ষেপ নিচ্ছি। এ বছরেই হয়তো কাজ করবো। এখন চলাচল উপযোগী করার জন্য আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে কিছুটা মেরামত করা হবে। যাতে যাত্রীদের দুর্ভোগ কম হয়।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, ‘ বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপদের সাবেক ও বর্তমান প্রকৌশলীদের সাথে কয়েকদফা আলোচনা করেছি। সংস্কারের আশ্বাস দিলেও তারা বিষয়টির সমাধান করেনি। যার ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’ 


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //