শেরপুরে দখলদারদের কবলে গারো পাহাড়

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি শেরপুর জেলা। বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তে শেরপুর জেলায় রয়েছে বিস্তৃত বনভূমি। ওই বনভূমির পুরোটাই বন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ি ও শ্রীবরদী উপজেলার গারো পাহাড়ের রাংটিয়া, মধুটিলা ও বালিজুড়ি রেঞ্জসহ জেলায় প্রায় ২০ হাজার একর বনভূমি রয়েছে। তবে, বন বিভাগের অভিযোগ, বন বিভাগের এই বিশাল জমির শতকরা প্রায় ২০ শতাংশই এখন দখলদারদের হাতে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১২০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, সম্প্রতি পাহাড় কেটে তৈরি করা হচ্ছে চাষাবাদের জমি। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন বাড়ি। এতে অন্তিত্ব সংকটে গারো পাহাড়।

বন বিভাগের তথ্যমতে, শেরপুর বন বিভাগের আওতায় রাংটিয়া রেঞ্জে ৮৮৮০ একর, মধুটিলা রেঞ্জে ৪২৩৫ একর এবং বালিজুড়ি রেঞ্জে ৭৫৮৫ একর বনভূমি রয়েছে। ৩টি রেঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাংটিয়া রেঞ্জে ১৪৬৬ একর বনভূমি বেদখলে রয়েছে, যার বর্তমান মৌজাভিত্তিক বাজার মূল্য ৭৬ কোটি ২৪ লাখ ৬০ হাজার ৬২৭ টাকা। বালিজুড়ি রেঞ্জের আওতায় ৪৭৭.৩৪ একর, যার বাজার মূল্য ২০ কোটি ৬৪ লাখ ৬৭ হাজার ২৪৯ টাকা। মধুটিলা রেঞ্জের আওতায় ৬০২ একর বনভূমি বেদখলে রয়েছে। মৌজাভিত্তিক বাজারমূল্য ২২ কোটি ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৫৫ টাকা।

বন বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে উল্টো বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেই মামলা ও হামলা করেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার অভিযোগ, শেরপুর সীমান্তে দখলে থাকা বেশিরভাগ জমিই এখন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় রয়েছে। যে কারণে উচ্ছেদ করতে গেলে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হতে হয়। অনেক সময় হামলার শিকারও হতে হয় কর্মকর্তাদের বলেও জানান তিনি।

এদিকে, স্থানীয়দের বলছেন, উচ্ছেদ করলে তাদের যাওয়ার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। এমনই এক বাসিন্দা   জিতার আলী। বর্তমান তার বয়স ১১৭। তিনি বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের আগে থাইকা আমরা এই জাগাত থাহি। আমরার পুলাপান নাই, নাতিও এহানেই থাহে। আমগোর আর কোনো জাগা জমি নাই। এইন থে আমগোরে (আমাদের) উডাইয়া ( উঠিয়ে বা উচ্ছেদ করে) দিলে আমরার যাবার জাগা নাই।’ গজনী এলাকার কৃষক হেকমত আলী বলেন, ‘আমি বাপের কাছ থেকে এই জায়গা পাইছি। আমার বউ-পুলাপান লইয়া আমি এহন এই জাগাতি থাহি। এই গ্রামেই চাষাবাদ কইরা খাই। আমগোরে এইহান থেকে তুইলা দিলে আমগোর থাকার-খাওয়ার ব্যবস্থা কইরা তুইলা দিলে আমরা যাইতে পারমু। নইলে রাস্তায় থাহা ছাড়া আমগোর উপায় নাই।’

এ বিষয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ জানান, ‘জবরদখকারীদের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি মেনে ব্যবস্থা নিচ্ছি। দখলদার যেই হোক না কেন, কাউকেই ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুনর্বাসনের মাধ্যমে জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করা হবে। পাশাপাশি বন বিভাগের জমিগুলো যেন বেদখল না হয় সেদিকেও আমরা সচেষ্ট রয়েছি।’

ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাঈম বলেন, ‘সীমান্তের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এখানে বাস করছেন। আমাদের সরকার প্রধান যদি রোহিঙ্গাদের জায়গা দিতে পারেন, তাহলে আমরা এদেরকেও জায়গা দিতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘অবশ্যই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেই তাদেরকে সরাতে হবে, এর আগে নয়। তাদের উচ্ছেদের কথা ভাবার আগে দ্রুত তাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে আমাদের ভাবা উচিত।’ 

এদিকে নিয়মিত দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ময়মনসিংহ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক প্রশান্ত কুমার সাহা। তিনি জানান, ‘এরপরও তাদের দমানো সম্ভব হচ্ছে না। ইতোমধ্যে আমরা দখলদারদের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়েছি। উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //