শেরপুরে ব্রহ্মপুত্র নদ খননে গড়িমসি

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই ও পূর্ণভবা নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় ব্রহ্মপুত্র নদের প্রায় ১৮ কিলোমিটার ড্রেজিং কাজ শুরু হয় গত বছরের ৩১ অক্টোবর। 

ড্রেজিং কাজের উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। উদ্বোধনের সাড়ে চার মাস পার হলেও নদী খনন কাজ প্রাথিমক পর্যায়ের এক কিলোমিটারও শেষ হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় চরবাসীর অভিযোগ, উদ্বোধনের পর থেকে বেশিরভাগ সময় ড্রেজিং কাজ বন্ধ থাকে। মাঝে মধ্যে দিনে দুই-একবার চালু হলেও টানা ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত বন্ধ থাকারও অভিযোগ রয়েছে। সামনে বর্ষায় খনন কাজ বন্ধ থাকবে। ওই খনন করা নদী আবার পলিতে ভরে যাবে। 

গত ১২ মার্চ দুপুরে সদর উপজেলার চর পক্ষীমারি ইউনিয়নের পুরাতন ঘাট এলাকায় নদী খননের কাজ সরেজমিনে দেখা যায়, ড্রেজিং কাজ বন্ধ রয়েছে। এসময় সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে লোকদেখানে মেশিন চালু করলেও ড্রেজিং কাজ বন্ধই থাকে। পরে কর্মরত প্রকৌশলী ও অন্য কর্মচারীর কাছে ড্রেজিং বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো কিছু বলে প্রকল্প ব্যবস্থাপককে খবর দিয়ে নিয়ে আসেন। 

এসময় ওয়ের্স্টান ইঞ্জিনিয়ারিং প্রা. লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সাজেদুল করিম জানায়, আমাদের খনন কাজে স্থানীয়রাসহ নানাজন বাধাগ্রস্থ করে আসছে। ফলে আমাদের কাজে একটু গতি কমেছে। কিন্তু খনন কাজ যথাসময়ে শেষ করা হবে। এছাড়া আমাদের খনন বালু রাখার জন্য যে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে তা আমাদের ক্যাপাসিটি পাইপের চেয়ে একটু বেশি দূরে। বর্ষায় কাজ বন্ধ থাকলেও পরবর্তী সময়ে খননের কোনো ক্ষতি হবে না বলেও তিনি জানায়।

তবে প্রকল্প ব্যবস্থাপকের অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় চরবাসী মমিনুল বলেন, এখানে কেউ তাদের কাজে বাধা দেয়নি। এটা তাদের অজুহাত।

সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ড্রেজিং কাজের গতিতে শেরপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সদর উপজেলার চরপক্ষী মারি গ্রামে নদী তীরে প্রস্তবিত ৬ একর জমির উপর গুচ্ছগ্রামের মাটি ভরাটের চুক্তি ছিলো ওই ড্রেজিংয়ের বালু দিয়ে। সে হিসেবে আমি প্রায় প্রতিদিনই ভরাট কাজ দেখতে গিয়ে দেখেছি তাদের কাজ বন্ধ থাকে। তবে আমার উপস্থিতি টের পেয়ে কাজ শুরু করে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে আমাদের চুক্তি ছিলো ওই ৬ একর জমি বালু দিয়ে ভরাট করতে মাত্র ১০ দিনের মধ্যে। অথচ তারা সেটি ভরাট করেছে সাড়ে চার মাসে। 

বিআইডব্লিউটি সূত্রে জানা গেছে, সরকার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই ও পূণর্ভবা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নৌপথ পুনরুদ্ধারের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। সেই প্রকল্পের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের ২২৭ কিলোমিটারের মধ্যে শেরপুর জেলা অংশে ১৮ কিলোমিটার নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধারে ড্রেজিং করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। প্রকল্পের সময় দেয়া হয়েছে ৪ বছর। 

শেরপুর জেলা অংশে দু’টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পেয়েছে। এরমধ্যে জামালপুর জেলার তুলশির পর সীমানা থেকে সদর উপজেলার কামারের চর ঘাট পর্যন্ত ১০০ কোটি ২৪ লাখ ৪২ হাজার টাকার প্রায় ১৩ কিলোমিটার নদের খনন কাজ পায় ঢাকার ওয়ের্স্টান ইঞ্জিনিয়ারিং প্রা. লিমিটেড। অপর অংশ সদর উপজেলার কামারের চর ইউনিয়নের ৬নং ভাটি পাড়া থেকে জঙ্গলদি চর পর্যন্ত ৪৪ কোটি টাকার ৫ কিলোমিটার পায় আনোয়ার খান মর্ডান কোং। 

এদিকে খনন কাজের সার্বিক বিষয়ে সদর নৌ-পরিবহন বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী জিএম সাব্বির কাজের ধীরগতির কথা স্বীকার করে বলেন, প্রথমত উদ্বোধনের পর আমাদের ড্রেজিং মেশিন সেট করতে ও বালু রাখার পর্যাপ্ত স্থান না পাওয়ায় আমাদের কাজ একটু কম হচ্ছে। তবে জায়গার সংকুলন পেলেই আমাদের গতি বাড়বে ও আরো ড্রেজিং মেশিন আসবে। সেক্ষেত্রে সময়মতোই আমাদের কাজ শেষ করতে পারবো। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //