চুয়াডাঙ্গায় ফসলী জমিতে অবৈধ ইটভাটা

চুয়াডাঙ্গা জেলার ৯০টি ইটভাটায় ৩ লাখ ঘনফুট মাটি পুড়িয়ে উৎপাদন হচ্ছে ৪০ কোটি ৫০ লাখ ইট। জমির উপরি ভাগের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করার মহাযজ্ঞ চলায় জেলার ফসলী জমি উর্বরা শক্তি হারাচ্ছে। অবৈধভাবে ফসলী জমির মাটি কেটে বিক্রি করার অপরাধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অর্থদণ্ড করার বেশি আর কিছু করতে পারছে না। সারা রাত অবৈধভাবে কৃষকের জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় ট্রাক্টরে বোঝায় করে বিক্রি করছে এ শ্রেণির মুনাফা লোভী। তবে ইটভাটা মালিকরা অবৈধভাবে ফসলি জমি কেটে মাটি কেনার বিষয়টি মানতে নারাজ। 

বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব জানান, একটি ইটভাটা বৈধভাবে চালু করতে হলে বিএসটিআই, পরিবেশ অধিদপ্তর, শিল্প কলকারখানা অধিদপ্তর, ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও জেলা প্রশাসকের ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনসহ ৬টি প্রতিষ্ঠানে ইট পোড়ানো মৌসুমে ইটভাটা মালিকদের বিভিন্ন খাতে ব্যয় হয় ১ কোটি ৯৫ লাখ ২১ হাজার টাকা।

চুয়াডাঙ্গার ইটভাটা মালিক হাবিবুর রহমান লাভলু বলেন, আবহাওয়া ভাল থাকলে চুয়াডাঙ্গার ভাটাগুলোতে ইট উৎপাদন বেশি হয়। ইটভাটায় ব্যবহৃত মাটি নদী, খাল, বিল থেকে সংগ্রহ করা হয়। এজেলায় ৪-৫টি ইটভাটা বাদে সব ইটভাটায় উৎপাদিত ইট মাপে ছোট আকারে তৈরি করে দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে, যা অন্যায়। ইটের প্রকৃত মাপ হবে ১০ ইঞ্চি লম্বা, ৫ ইঞ্চি চওড়া ও ৩ ইঞ্চি উচ্চতা কিন্তু সেটা থাকছে ৯ ইঞ্চি লম্বা, ৪ ইঞ্চি চওড়া ও আড়াই ইঞ্চি উচ্চতা। ওই ইটের দাম নেয়া হচ্ছে অত্যন্ত বেশি। যা আশপাশের জেলা থেকে বেশি।

চুয়াডাঙ্গার একজন প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদার ইটভাটার মালিক ইকবাল মাহমুদ টিটু বলেন, ইট তৈরি কাজে মাটি প্রয়োজন; কিন্তু চুয়াডাঙ্গায় মাটি পাওয়া দুষ্কর হচ্ছে। সে কারণে মাটি সংগ্রহে বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অনেক সরবরাহকারী ইটভাটায় মাটি সরবরাহের সময় ব্যক্তি মালিকনা জমি থেকে মাটি কেটে সরবরাহ করে; কিন্তু সেটা কোথা থেকে আনা হয় তা দেখা সম্ভব হয় না। 

এছাড়া সাবেক জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ নদী খনন ও বালি উত্তোলন কাজে উৎসাহিত করতো। সে সময় ইটভাটা মালিকরা মাথাভাঙ্গা ও চিত্রানদী ও নবগগঙ্গা খাল কেটে সেখান থেকে মাটি সংগ্রহ করতো। বর্তমান জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার নদী ও খাল এবং ব্যক্তি মালিকনা জমি থেকে মাটি না কাটার নির্দেশ জারী করেন। এরপর থেকে ইট প্রস্তুতের মাটি পাওয়ায় প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। 

তিনি আরো বলেন, এজেলায় এত ইটভাটার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজনের তুলনায় ইটভাটা এখানে বেশি। জেলা ব্যাপী মানসম্মত কম ইটভাটা নির্মাণ হলে ভাল হয়। এটা হলে প্রশাসনিকভাবে তদারকি করা সম্ভব হবে। 

চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার দ্বীননাথপুর গ্রামের হাবিুল্লার ছেলে কৃষক জয়নাল (৬৫), একই গ্রামের মরহুম বশির উল্লার ছেলে হারিশ মিয়া (৫২) জানান, ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে দেয়ার কারণে তাদের জমিতে প্রায় ৪ বছর ফসল ভাল হয়নি। জৈবসহ বিভিন্ন সার প্রয়োগ করে জমি প্রস্তুত করতেই তাদের সময় পার করতে হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলী হাসান বলেন, মাটি কাটার এ ধরনের অরাজগতা ঠেকাতে না পারলে কয়েক বছর পরে এ জেলায় ফসল উৎপাদন দুষ্কর হয়ে পড়বে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। 

কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আতাউর রহমান বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৮৫ শতাংশ ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। এরা কোন আইন কানুন না মেনেই অবৈধভাবে ইটভাটা নির্মাণ করেছে। তিনি বলেন, মাত্র ৫ জনকে নিয়ে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় কার্যক্রম চালু রাখতে হচ্ছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //