অসহায় মায়ের পাশে পুলিশ সুপার

ফুলমতি, ভাগ্য বিড়ম্বিত এক জননী। যে বয়সে ছেলে-মেয়েসহ পরিবার-পরিজনের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় জীবনযাপনের কথা, সেই বয়সেই তার ওপর নেমে এসেছে চরম অবজ্ঞা আর অবহেলা! ছেলে-বউয়ের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে এই বয়সে তাকে ঘর ছাড়তে হয়েছে। 

মর্মস্পর্শী এই ঘটনাটি ঘটেছে নড়াইল সদরের শাহাবাদ ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে। অমানবিক ঘটনাটি জানার পর অবশেষে বয়োবৃদ্ধ ফুলমতির পাশে দাঁড়িয়েছেন নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় পিপিএম (বার)। ১০ মার্চ দুপুরে নির্যাতিতা ফুলমতির বাড়িতে যান তিনি।

পুলিশ ও নির্যাতিতা ফুলমতি জানান, তার স্বামী কৃষ্ণপদ গাইন বেশ আগেই মারা গেছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর ফুলমতির একমাত্র ছেলে শিবুপদ গাইন (৪২) তার (ফুলমতি) একমাত্র অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়। তবে শিবুপদ ও তার স্ত্রী বয়োবৃদ্ধ ফুলমতির সঙ্গে ভালো আচরণ করত না। প্রায়ই তাকে মানসিক নির্যাতন করত। 

সর্বশেষ গত ৬ মার্চ ছেলে শিবুপদ ও তার স্ত্রীর অমানুষিক অত্যাচার সইতে না পেরে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান ৮০ বছরের বয়োবৃদ্ধ ফুল মতি। ভেবে-চিন্তে কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে হঠাৎ করে মাথায় বুদ্ধি আসে তার। ছেলে ও তার স্ত্রীর অত্যাচারের বিষয়টি তিনি পুলিশকে জানাবেন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে এক পর্যায়ে ফুলমতি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আসেন। তার ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের কথা পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়কে খুলে বলেন। 

মায়ের ওপর ছেলের এ ধরনের অত্যাচারের নির্মম বর্ণনা শুনে পুলিশ সুপার তাৎক্ষণিক সদর থানার ওসি ইলিয়াস হোসেনকে (পিপিএম) এ ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা দেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশ মোতাবেক বয়োবৃদ্ধ ফুলমতিকে গাড়িযোগে বাড়িতে রেখে আসেন এবং তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। 

এরপর ১০ মার্চ দুপুরে বৃদ্ধা মায়ের খোঁজখবর নিতে তাদের বাড়িতে যান পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় পিপিএম (বার)। এ সময় ফুলমতিকে পুলিশ সুপার আশ্বস্ত করেন, তার ছেলে ও ছেলের বউ আর কোনো ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন করবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, যদি কখনো এ ধরনের দুঃসাহস দেখান, তাৎক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় পুলিশ সুপার বৃদ্ধা ফুলমতিকে ফলসহ কিছু খাবার দেন। 

ফুলমতি বলেন, পুলিশ সুপার স্যারের কারণে সংসারে আবার উঠতে পারছি। কোনো মায়ের সঙ্গে ছেলে-মেয়েরা যেন এ ধরনের খারাপ কাজ না করে, সেই আশা আমার। ফুলমতির ছেলে শিবুপদ ছাড়াও দুই মেয়ে আছেন। তাদের বিয়ে হয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

বিষয় : নড়াইল

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //