বরিশালে বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপও

বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি হাসপাতালে মহামারি করোনাভাইরাসের মতোই ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। 

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এতোটাই বেড়েছে যে হাসপাতালের অভ্যন্তরে জায়গার সংকুলন না হওয়ায় ওয়ার্ড ছাপিয়ে রোগীদের স্থান হয়েছে হাসপাতালের বাইরে গাছতলায়।

গতকাল মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালটির ডায়েরিয়া ওয়ার্ডে মাত্র চারটি বেড রয়েছে। অথচ গত কয়েকদিন ধরেই ওয়ার্ডটিতে প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। গতকাল দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে প্রায় ৬০০ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। গত মার্চ মাসে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭৫১ জন।

এদিকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়লেও চিকিৎসা সেবা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। সঠিক সময়ে ওষুধ ও স্যালাইন না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন তারা। এসব ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে বলে দাবি তাদের।


হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স আয়শা আক্তার বলেন, হঠাৎ করেই রোগী বেড়ে গেছে। এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে তাদের ওয়ার্ডে এমনকি বারান্দায়ও জায়গা দিতে পারছি না। সংকট মোকাবেলায় ওয়ার্ডের বাইরে গাছতলায় চাঁদর বিছিয়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রতিদিন অর্ধশত রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত হাসপাতালে কোনো ওষুধের সংকট নেই। যা আছে তা দিয়ে ম্যানেজ করা হচ্ছে। তাই চিকিৎসা সেবা নিয়ে রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ ভিত্তিহীন।

বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, আমাদের ডায়রিয়া ওয়ার্ডটি মাত্র চার শয্যার। এর মধ্যে দুটি পুরুষ ও দুটি মহিলা ওয়ার্ডের জন্য। যেখানে প্রতিদিন বহুগুণ রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। অথচ আমাদের চিকিৎসক, নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরও সংকট রয়েছে। তবে নানা সংকটের মধ্যেও আমরা সাধ্যমতো চিকিৎসা সেবা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

অপরদিকে একই চিত্র দেখা গেছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালটিতে শুধুমাত্র ডায়রিয়াআক্রান্ত শূন্য থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ওয়ার্ডটিতে শয্যা সংখ্যা ১৫টি। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত ওয়ার্ডটিতে একসাথে ৪২ জন শিশুকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

ওয়ার্ডের দায়িত্বরত নার্সরা জানিয়েছেন, সোমবার রাত ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ৩০ শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে শেবাচিমের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে। এদের মধ্যে থেকে কয়েকজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও দুপুরের মধ্যে রোগীর ভর্তির সংখ্যা ৪০ জন ছাড়িয়েছে। 

হঠাৎ করেই বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে স্বাস্থ্যবিভাগও। ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে বরিশালে এসেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দল। গ্রাম পর্যায়ে তারা ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করছেন। বর্তমানে তারা বরগুনা জেলায় অবস্থান করছেন। তাদের রিপোর্ট পেলে ডায়রিয়ার প্রধান কারণ কি সেটা নিশ্চিত হওয়া যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানিয়েছেন, বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বিভাগের ছয় জেলায় মোট ২৪ হাজার ৩৩৭ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেছে। তাছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় ৭৪৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, গ্রাম অঞ্চলের মানুষ বেশিরভাগ সময় গৃহস্থালির কাজে পুকুর ও ডোবার পানি ব্যবহার করে থাকেন। আবার শহর পর্যায়ে বিষুদ্ধ পানি পান করলেও রাস্তার পাশে নোংরা ও উন্মুক্ত স্থানে তৈরি অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে থাকেন। এ খাবার থেকেই ডায়রিয়ার জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। এমন পরিস্থিতিতে গৃহস্থালির কাজে টিউবওয়েলের পানির ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাস্তার পাশে উন্মুক্ত স্থানে তৈরি হওয়া খাবার না খেতে পরামর্শ দিয়েছেন। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //