গ্রামীণ নারীদের আলোর পথ দেখাচ্ছে ‘তথ্য আপা’

শেরপুরের পাঁচ উপজেলার গ্রামীণ নারীদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা, বাল্যবিবাহ, ফতোয়া, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, চাকরি সংক্রান্ত তথ্য, আইনগত সমস্যা ও ডিজিটাল নানা সেবা দিয়ে লাখো নারীকে আলোর পথ দেখাচ্ছে ‘তথ্য আপা’। 

শুধু তাই না করোনাকালীন সময়ে দুস্থ ও অসহায় মানুষের কাছে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার কাজও করেন তথ্য আপা প্রকল্পে কর্মরত কর্মীরা। 

জাতীয় মহিলা সংস্থা জেলা শাখা কার্যালয়, তথ্য আপা প্রকল্প কার্যালয় ও অন্যান্য সূত্রে জানা যায়, ‘শেখ হাসিনার বার্তা নারী-পুরুষ সমতা’, ‘নারী-পুরুষ সমতায় তথ্য আপা পথ দেখায়’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ডিজিটাল দেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্পটি (দ্বিতীয় পর্যায়) শেরপুর সদর উপজেলাসহ নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নকলায় চলমান রয়েছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জাতীয় মহিলা সংস্থা। 

প্রকল্পটি একযোগে আটটি বিভাগের ৬৪ জেলার ৪৯০টি উপজেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ওইসব উপজেলার প্রত্যেকটিতে প্রকল্পের আওতায় একটি করে তথ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রতিটি তথ্যকেন্দ্রে একজন তথ্যসেবা কর্মকর্তা ও দুইজন সহকারী তথ্য সেবা প্রদানের কাজে নিয়োজিত আছেন। 


সরকার কর্তৃক গৃহীত রূপকল্প-২০২১, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০১৬-২০২০) ও এসডিজির লক্ষ্যমাত্রায় নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়। দেশের গ্রামের অসহায়, দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত কিংবা কম সুবিধাপ্রাপ্ত নারীর তথ্যে প্রবেশাধিকার ও তাদেরকে তথ্য প্রযুক্তির সেবা প্রদানের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নকে ত্বরান্বিত করেছে। এ লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ডিজিটাল দেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন শীর্ষক প্রকল্পটি গৃহীত হয়। প্রকল্পটি প্রথম পর্যায়ে ১৩টি উপজেলায় সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৪৯০টি উপজেলায় পাঁচ বছর মেয়াদী (এপ্রিল ২০১৭ থেকে মার্চ ২০২২ পর্যন্ত) তথ্য আপা প্রকল্পটি বাস্তবায় করা হচ্ছে। 

প্রকল্পের মোট জনবল ১৯৭৮ জন। ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে ১৮ জন ও ৪৯০টি তথ্যকেন্দ্রে ১৯৬০ জন কর্মরত আছেন। এই প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪৪ কোটি ৯০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।

উপকারভোগী সদর উপজেলার জঙ্গলদী গ্রামের রৌশনারা, কুমরী কাটাজান গ্রামের পারভীন ও চান্দেরনগর গ্রামের মনোহার বলেন, তথ্যকেন্দ্রে কর্মরত তথ্য আপারা উঠান বৈঠকে উপস্থিত গ্রামীণ নারীদের ইন্টারনেটের বাস্তব ব্যবহারের মাধ্যমে সেবা প্রাপ্তির পদ্ধতি প্রদর্শন করেন। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কৃষি কর্মকর্তা, মৎস্য কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সরকারি আইটি বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন বিষয়ে রিসোর্স পারসন হিসেবে উপস্থিত থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মুক্ত আলোচনা করেন। 

নালিতাবাড়ীর গোজাকুড়া গ্রামের রিতা আক্তার, পূর্ব কাপাশিয়া গ্রামের সালমা বেগম ও গোল্লারপাড় গ্রামের ইরানী বেগম বলেন, প্রতিটি উঠান বৈঠকে ১০০ জন নারী অংশগ্রহণ করেন। মাসে প্রতিটি তথ্যকেন্দ্রে দুইটি করে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামীণ নারীদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা, বাল্যবিবাহ, ফতোয়া, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, চাকরি সংক্রান্ত তথ্য, আইনগত সমস্যা ও বিদেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ই-মেইলে তথ্য আদান প্রদান, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলার পদ্ধতি শিখিয়ে দেয়া সম্পর্কিত সেবা দিয়ে লাখো নারীকে আলোর পথ দেখাচ্ছে তথ্য আপা প্রকল্পটি। 


তথ্য আপা কেন্দ্রের সদর উপজেলা শাখার কর্মকর্তা সেতু রানী বলেন, তথ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা, ওজন পরিমাপ ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা এসব প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। 

তিনি আরো বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকারি নির্দেশনায় অফিস বন্ধ রয়েছে। পরবর্তীতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিক নির্দেশনা মোতাবেক সেবা প্রদান আবারো শুরু হবে।

জাতীয় মহিলা সংস্থার জেলা কর্মকর্তা আসলামউদ্দীন বলেন, মাইন্ড ইন্সপ্যায়ার টু ন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট এবং সেলফ হেল্প গ্রুপের সদস্যদেরকে টেক্সটুয়াল, অডিও, ভিডিও কনটেন্টের মাধ্যমে ই-লার্নিং প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। যার ফলে গ্রামীণ নারীদের আইটিইএস দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। ই-লার্নিং সিস্টেমে লাইভ ক্লাস, লাইভ ব্রডকাস্ট বক্তৃতা, পূর্ব নির্ধারিত অনলাইন শ্রেণিকক্ষ, ২৪ ঘন্টা ই-লার্নিং চ্যানেল, ভিডিও গ্যালারি, মোবাইল টিভি, লাইভ স্ট্রিমিং ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকছে। মোট কথা তথ্য আপা প্রকল্প একটি ডিজিটাল প্রতিচ্ছবি।

জাতীয় মহিলা সংস্থার জেলা চেয়ারম্যান নাসরিন বেগম ফাতেমা বলেন, প্রতিটি তথ্য কেন্দ্রে নিয়োজিত তথ্যসেবা কর্মকর্তা ও তথ্যসেবা সহকারীরা সংশ্লিষ্ট উপজেলার গ্রামীণ নারীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ল্যাপটপ ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন, ব্যবসা, জেন্ডার ও কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করছেন। এছাড়া স্কাইপের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলার সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের সাথে সেবাগ্রহীতার কথোপকথনের মাধ্যমে সমস্যার দ্রুত ও কার্যকরী সমাধানে সহায়তা করছেন।

তিনি আরো বলেন, গ্রামীণ ও উপশহরাঞ্চলের নারীরাই তথ্যভাণ্ডারের প্রধান সুবিধাভোগী। তবে তথ্যভাণ্ডারের সেবাগ্রহীতা হতে পারেন শিক্ষাবিদ, গবেষক, নীতিনির্ধারক ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ।

জেলা মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক লুৎফর কবির বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মতো তথ্য আপা প্রকল্পটি ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এটি বাস্তবায়নে জেলার পাঁচ উপজেলার ইউএনও সাহেবরা প্রত্যক্ষভাবে তদারকি করছেন। 

সদর উপজেলা ইউএনও ফিরোজ আল মামুন বলেছেন, প্রকল্প অফিস ও মাঠ পর্যায়ে সভা, অনুষ্ঠান আয়োজনের তথ্য সংরক্ষণ, উপকারভোগীদের তালিকা সংরক্ষণ, তাদেরকে সেবা প্রদান, সেবা প্রদানকালে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করার মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //