গাজীপুরে ঘরমুখো মানুষের ভিড়

মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত চলমান লকডাউন উপেক্ষা করে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় হাজার হাজার যাত্রী এসে জড়ো হচ্ছেন সকাল থেকে। শত বাধা উপেক্ষা করেই স্বজনদের সাথেই ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে নারীর টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে এসব মানুষ।

ঈদ কিংবা বিশেষ কোনো ছুটিতে উত্তরবঙ্গের মানুষ বাড়িতে যাওয়া–আসার সময় চন্দ্রায় যানজটে আটকা পড়ে নাজেহাল হয়নি, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে, সেই যানজট এবার নেই। তবে যানবাহন চলাচলে সরকারি বিধিনিষেধ থাকায় চন্দ্রা ত্রিমোড়ে সৃষ্টি হয়েছে মানুষের জট।

ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় আজ মঙ্গলবার ভোর থেকে কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় শত শত ঘরমুখো মানুষ যানবাহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। করোনা নিয়ে তাদের মধ্যে তেমন সচেতনতা নেই। সামনে খালি যে যানবাহন পাচ্ছেন, তাতে উঠার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। কেউ ট্রাকে, কেউ মাইক্রোবাসে, কেউবা মোটরসাইকেল ভাড়া করে বাড়ির পথে রওনা হচ্ছেন। কাউকে কাউকে পায়ে হেঁটেও যেতে দেখা গেছে। তবে, যে পরিবহনেই যাক না কেন যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে তিন থেকে চারগুণ ভাড়া।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরগামী পোশাক শ্রমিক আসমা বেগম জানান, মাত্র ৪০ টাকার ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৩০০ টাকা। মানুষের এই হয়রানী বন্ধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন খুলে দেয়ার দাবি জানান তিনি ।

১০-১২ জনের একটি দল চন্দ্রার দিক থেকে পায়ে হেঁটে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের দিকে যাচ্ছে। তাদের কারো হাতে ধানকাটার কাঁচি, কারো হাতে আছে দা-কোদাল। তাদের সাথে কথা হয় খাড়াজোড়া এলাকায়। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার রায়পুরা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল আলীম বলেন, ‘মুই হনু আসল অংপুইরা (রংপুর), বাসোত উঠুম না, দরকারে মুই হাঁটি হাঁটি অংপুর (রংপুর) যাইম।’

গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া লাবিব ফ্যাশন কারখানার শ্রমিক মহব্বত আলী চাকরির কারণে থাকেন বাসন এলাকায়। সেহরি খেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে অটোরিকশায় ১০০ টাকা ভাড়া দিয়ে চন্দ্রা এসেছেন। তিনি যাবেন রাজশাহীর মতিহার এলাকায়। চন্দ্রায় এসে সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে আছেন, কোনো যানবাহন পাচ্ছেন না। কীভাবে যাবেন, জানতে চাইলে বলেন, ‘একটা উপায় হয়ে যাবে। বাস যদি না পাই, তাহলে ট্রাকে উঠে চলে যাব। বাড়িতে গিয়ে মা-বাবার সাথে ঈদ করব, এর চেয়ে আনন্দের আর কী আছে। করোনায় যা হয় হবে।’

গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ি এলাকার কারখানাশ্রমিক আরহাম হোসেন বলেন, ‘১০ দিনের ছুটি পেয়েছি। এত দিন এখানে থেকে কী করব? তাই যেভাবেই হোক বাড়িতেই যাব।’ কারখানাশ্রমিক সামিয়া আক্তার বলেন, ‘চাকরির কারণে বেশিরভাগ সময় বাড়িতে যেতে পারি না। তাই বলে ঈদের সময় বাড়ি যাব না, তা কি হয়!’

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের ওপর দিয়ে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলাচল করছে না। তবে লোকাল যাত্রীবাহী বাস, কিছু ট্রাক-পিকআপ ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে। চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় যাত্রীবাহী পরিবহন না পেয়ে মানুষের জট লেগে আছে। আজ সকাল থেকে ওই জট শুরু হয়ে বেলা বাড়ার সাথে সাথে আরো বাড়তে থাকে। কারখানাগুলোতে প্রথমে ছুটি ছিলো তিনদিনের। কিন্তু এখন তারা আন্দোলন করে ১০ থেকে ১২ দিন করে ছুটি আদায় করছেন। তাতে ধারণা করা হচ্ছে, বিকেলের পর থেকে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় ঘরমুখো মানুষের চাপ কয়েক গুণ বাড়বে। মহাসড়কে যানবাহনের কোনো জটলা যাতে সৃষ্টি না হয়, তার জন্য পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। আগের মতোই চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় নিয়ন্ত্রণকক্ষ ও ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম জানান,  বিভিন্ন গন্তব্যে গমনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মহাসড়কে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। মহাসড়কে কোনো যানজট নেই, তবে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় ঘরমুখী মানুষের অনেক ভিড়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //