ঘূর্ণিঝড় আমফানের এক বছর আজ

খাবার পানি ও বেড়িবাঁধের দাবি উপকূলবাসীর

প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড় আমফানের এক বছর পার হলেও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি সাতক্ষীরা জেলা আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। বেড়িবাঁধ ভাঙনের আতঙ্কে এখনো তটস্থ সবাই। যোগাযোগ ব্যবস্থাও রয়েছে বিচ্ছিন্ন। চিকিৎসা, সুপেয় পানি, স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন সংকটে বিপর্যস্ত উপকূলীয় এলাকার লক্ষাধিক মানুষ।

জানা যায়, ২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয় গোটা সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চাকলা, শ্রীপুর, কাঁড়িকাউনিয়া, হরিষখালি, সুভদ্রাকাটি, ঘোলা, শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালি, সদর ইউনিয়নের দয়ারঘাট ও শ্যামনগর উপজেলা কাশিমারী ইউনিয়নের কাশিমারী, বুড়িগোয়লিনি ইউনিয়নের দূর্গাবাটি, গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নের উপকূলীয় এলাকা। পানিবন্দী হয়ে পড়ে উপকূলীয় এলাকার ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ। ঘর-বাড়ি ধ্বসে পড়ে ২ হাজারেরও বেশি। এখনো ডুবে আছে শতাধিক ঘর-বাড়ি। এতে মাছের ক্ষতি হয় ১৭৬ কোটি ৩ লাখ টাকার। কৃষিতে মোট ক্ষতি হয় ১৩৭ কোটি ৬১ লাখ ৩০ হাজার টাকার। এলজিইডি ও সড়ক বিভাগের ক্ষতি হয় কমপক্ষে ৩০ কি. মি. সড়ক। কাজ না থাকায় সেখানকার লোকজন বর্তমানে বেকার হয়ে পড়েছেন। আমফানের এক বছর পার হলেও উপকূলীয় এলাকায় গৃহহীনের সংখ্যা এখনো দুই শতাধিক। বেড়িবাঁধের রাস্তার ওপর খুপরি ঘরে বসবাস তাদের।

আশাশুনি উপজেলার শ্রীপুর শুভদ্রকাটি গ্রামের সুকুমার দাশ ও পরিমল দাশ সহ উপকূলীয় এলাকাবাসী জানান, তাদের বসতবাড়ির জায়গাটুকু নদীর গর্ভে চলে গেছে। এখন তাদের মাথা গোজার কোন জায়গা নেই। তাড়া  এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে। নেই চিকিৎসার ব্যবস্থা। বেড়িবাঁধের অবস্থাও নাজুক। উপকূলীয় এলাকার এসব মানুষ সরকারের কাছে পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।

প্রতাপনগর গ্রামের মিলন মণ্ডল জানায়, আমফানের পর লবণ পানি উঠে পুরো এলাকা সবুজ গাছগুলো মরে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। রোদের তাপও বেড়েছে। এলাকায় কোনো কাজ নেই। এলাকার মানুষ এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছে।


প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, আইলা, সিডার ও সর্বশেষ আমফানের আঘাতে কপোতাক্ষ ও খেলাপেটুয়া নদী সংলঙ্গ ৮টি পয়েন্ট থেকে ভেঙে যায়। ৯/১০ মাস পানির নিচে থাকে পরো ইউনিয়ন। যার ফলে বাস্তাঘাট ব্রিজ, কালভার্ড সব নষ্ট হয়ে গেছে।

আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসিম কুমার চক্রবর্তী জানান, প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড়ের এক বছর পেরিয়ে গেলেও সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার মানুষ এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেননি। আজও সেখানকার মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের অভাব রয়েছে। একই সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থাও রয়েছে বিচ্ছিন্ন। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডে বেড়িবাঁধগুলো রয়েছে ভয়াবহ অবস্থায়। দুইএকটি জায়গায় সংস্কার করা হলেও অধিকাংশ জায়গায় রয়েছে ভয়াবহ ফাটল। যেকোনো সময় প্রবল জোয়ারের চাপে তা আবারো ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে। তিনি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে এ সময় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনি ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ মণ্ডল বলেন, আমফানের পর থেকে সুপেয় পানি, স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন সংকটে বিপর্যস্ত তার  ইউনিয়নের মানুষ।

শ্যামনগর লিডার্স এর নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডল বলেন, আম্পানের পারে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে নগদ টাকা, স্বাস্থ্য সুরক্ষার জিনিষপত্র, ঔষধ, খাবার স্যালাইন দিয়ে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। বর্তমান খাবার পানির তীব্র সংকট ও  বেড়িবাঁধগুলো রয়েছে ভয়াবহ অবস্থায়। 

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছিল এ অঞ্চলের বেড়িবাঁধগুলোর। প্রধানমন্ত্রী পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন যে অতিসত্বর ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারের। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসন, পানিউন্নয়ন বোর্ড, সেনাবাহিনীসহ জেলার সংশ্লিষ্ট সংস্থা অক্লান্ত পরিশ্রম করাই বেড়িবাঁধগুলো প্রাথমিকভাবে সংস্কার করা সম্ভব হয়েছে। তিনি এসময় সাতক্ষীরা জেলাকে দুর্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত জেলা ঘোষণার দাবি জানান। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //