মেঘনার ভাঙনের কবলে নবীনগরের ১৬ গ্রাম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের মেঘনা নদীর তীরবর্তী ১৬টি গ্রাম ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে। এর ফলে বদলে যাচ্ছে উপজেলার মানচিত্র। এলাকার অধিকাংশ মানুষ ঘরবাড়ি, ফসলি জমিজমা, ব্যবসায়িক দোকানপাট হারিয়ে হয়ে গেছেন সর্বস্বান্ত। 

নবীনগর উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রমত্তা মেঘনার প্রবল ভাঙনের খেলা চলছে প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে। ভৈরব-নবীনগর-নরসিংদী নদীপথের প্রায় ৮০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গত ৫ বছরে মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা। প্রতিবছর শতশত কৃষিজমি, বাড়িঘড় গ্রাস করছে সর্বনাশী মেঘনা। বাড়ছে উদ্বাস্ত ও ছিন্নমূলের সংখ্যা। মেঘনার ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে যাযাবরী জীবনযাপন করছে অসংখ্য পরিবার। 

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের ধরাভাঙ্গা, নুরজাহানপুর, মুক্তারামপুর, সোনাবালুয়া, বড়িকান্দি, মানিকগর বাজার, নয়াহাটি, চিত্রি, চরলাপাং, নজরদৌলত, গাছতলা, কেদারখলা, দুর্গারমপুরসহ এলাকার হাজার একর ফসলি জমিসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি ইতিমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।


অব্যাহত এ ভাঙনের ফলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নবীনগর উপজেলার আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাজারসহ কয়েকটি গ্রাম মেঘনাগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে বড়িকান্দি, ধরাভাঙ্গা, নুরজাহানপুর, মুক্তারামপুর, সোনাবালুয়া, মানিকনগর বাজার, চরলাপাং, কেদারখোলা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

প্রতি বর্ষা মৌসুমে এ ভাঙনের ভয়াবহতা চরম আকার ধারণ করে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী ভাঙনরোধ কল্পে ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে বড়িকান্দি নূরজাহানপুর, সোনাবালুয়া ও ধরাভাঙ্গা গ্রামের নদী ভাঙন এলাকায় কাজ চলছে ধীর গতিতে। পানির নিচে সাগর চুরির মতো ঘটনা ঘটছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

 নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুল বলেন, নদীর পাড়ের মানুষের সবচেয়ে বড় দুঃখ হলো নদী ভাঙন। মেঘনার ভাঙন রোধকল্পে ২০২০ সালে ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ঠিকাদার কাজ শুরু করেছেন, কিন্তু কাজের ধীর গতির কারণে অসংখ্য বাড়িঘর ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


নুরজাহানপুর গ্রামের বাসিন্দা ও জনশক্তি রফতানি ব্যুরোর সাবেক মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান জানান, ছোটবেলায় এক মাইল দূরে গিয়ে গোসল করেছি, আর এখন মেঘনার ভাঙনের কারণে আমাদের ঘরের কাছে নদী এসে গেছে। শত শত একর কৃষিজমি, বাড়িঘর, গাছপালা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, কবরস্থান ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। 

ভাঙন রোধকল্পে দ্রুত কাজ শুরু করার জন্য সরকারের কাছে দাবি করে তিনি বলেন, মরণের আগে যদি ভাঙন প্রতিরোধ বাঁধ দেখে যেতে পারতাম, তাহলে মরেও শান্তি পেতাম।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী জহির উদ্দিন আহম্মদ বলেন, কুমিল্লার এম জাহের ঠিকাদারের মাধ্যমে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে এ প্রকল্পের কাজটি শুরু হয়, কাজের ধীরগতি ও অবহেলার কারণে নতুন করে এই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বড়িকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার পারভেজ হারুত বলেন, এভাবে মেঘনার ভাঙন অব্যাহত থাকলে কোনো একদিন উপজেলার সম্পূর্ণ মানচিত্র পাল্টে যাবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //