করোনার নতুন হটস্পট দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল

দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট’

করোনাভাইরাসের বিপজ্জনক ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন তথ্য উঠে এসেছে সরকারি এক গবেষণায়।বলা হচ্ছে, ওই গবেষণায় যে ৫০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল তার ৪০টিতেই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যেটি ভারতে প্রথম শনাক্ত হয়েছে। 

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর ঢাকা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ,খুলনা ও গোপালগঞ্জ থেকে সংগৃহিত নমুনার জিনোম সিকোয়েনসিং করে এ তথ্য প্রকাশ করে।

এই অবস্থার মধ্যে শনিবার (৫ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় প্রাণহানি বাড়ার তথ্য জানিয়েছে। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৪৩ জনের। এর আগের দিন মারা যান ৩৪ জন। সর্বশেষ একদিনে আরো ১ হাজার ৪৪৭ জনের নতুন করে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১২ হাজার ৮০১ জন। রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৮ লাখ ৯ হাজার ৩১৪ জন। 

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় বিশেষ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সারা দেশে কার্যকর রয়েছে বিধি-নিষেধ। রবিবার এর মেয়াদ শেষ হবে। তবে নতুন করে আবার বিধি-নিষেধ কার্যকর হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত এখনও জানা যায়নি।

করোনার নতুন হটস্পট দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল
এদিকে, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা সহ বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি এলাকা করোনাভাইরাস সংক্রমণের নতুন হটস্পট হয়ে উঠছে। ভারতের সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরায় পরিস্থিতি সামাল দিতে শনিবার (৫ জুন) সন্ধ্যা থেকে সাতদিনের বিশেষ লকডাউন কার্যকর করা হচ্ছে। বাগেরহাটের মংলায় গত কয়েকদিন ধরে সংক্রমণের শতকরা হার ৪০ থেকে ৭০ শতাংশের মধ্যে উঠানামা করছে, যা নিয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। বিভাগীয় শহর খুলনায় সংক্রমণ পরিস্থিতিও নাজুক হয়ে পড়ছে।

করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সাতক্ষীরা জেলায় কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। ছবি: বিবিসি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় পরীক্ষা অনুপাতে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া রোগী ৭০ শতাংশ হবার ঘটনা অনেককেই চমকে দিয়েছিল। এবার একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে বাগেরহাটের মংলা উপজেলায়। উপকূলীয় এ জায়গাটিতেও গত কয়েকদিনে পরীক্ষা অনুপাতে করোনা ভাইরাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। 

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন কে. এম হুমায়ুন কবির বলেন, পুরো বাগেরহাট জেলার পরিস্থিতি নাজুক না হলেও মংলা উপজেলায় সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। তিনি জানান, মংলা উপজেলায় সংক্রমণ ২৬ তারিখ থেকে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের জেলায় এখন রোগী চিকিৎসাধীন আছে ২৬৪জন। এর মধ্যে ১৬৪ জন মংলা উপজেলায়। শনাক্তের হার উঠানামা করছে। প্রথম তিন দিন ছিল ৭০ পার্সেন্ট। গত দুইদিন ছিল ৪০ পার্সেন্ট, আজকে আবার ৭০ পার্সেন্ট।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আরেকটি জেলা সাতক্ষীরায় সংক্রমণ রোধ করার জন্য সেখানে লকডাউন আরোপ করেছে প্রশাসন। গত কিছুদিনের পরিসংখ্যান দেখা গেছে, সেখানে শনাক্তের হার ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। চিকিৎসক এবং গবেষকরা মনে করেন- যেসব জেলায় রোগী শনাক্তের হার বেশি সেখানে হয়তো ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এর জন্য দায়ী হতে পারে। গত ১৬ই মে'র পর থেকে ঢাকা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গোপালগঞ্জ এবং খুলনা থেকে ৫৪টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করেছে সংক্রামক রোগ বিষয়ক সরকারি প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর। সে নমুনাগুলোর মধ্যে ৮০ শতাংশই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছে আইইডিসিআর।

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন কে এম হুমায়ুন কবির বলেন, মংলায় সমুদ্র বন্দর এবং ইপিজেড আছে। এসব জায়গায় দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ কাজ করে। এছাড়া মংলা বন্দরে বিদেশ থেকে জাহাজও আসে।বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন আসতে পারে। ইন্ডিয়া থেকে অনেক নৌযান আসে। বাগেরহাট যদিও সীমান্তবর্তী জেলা নয়, কিন্তু সীমান্তবর্তী জেলার ক্রাইটেরিয়া (বৈশিষ্ট্য) এখানে আছে। তবে এসব কারণেই সংক্রমণ বেড়েছে কি না সেটি সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রতিদিন যে রিপোর্ট প্রকাশ করে সেখানে দেখা যাচ্ছে দেশ জুড়ে শনাক্তের সংখ্যা এখন ১১ শতাংশ ছাড়িয়েছে। অথচ তিন সপ্তাহ আগে এটি সাত শতাংশে নেমে এসেছিল।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //