মহাসড়কে আমের গাড়ি থামিয়ে হাট ইজারদারের চাঁদাবাজি

রাজশাহীর সর্ববৃহৎ আমের মোকাম পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজার। আর আম বাজার ঘিরে খাজনা আদায়ের নামে চলছে চাঁদাবাজির মহোৎসব। ভুক্তভোগীরা বলছেন, হাট ইজারদারের কথিত লোকজন আম ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিচ্ছে। 

এমনকি যারা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক দিয়ে আত্মীয়ের বাড়ি আম নিয়ে যাচ্ছেন তাদের কাছ থেকেও জোরপূর্বক খাজনার নামে টাকা আদায় করা হচ্ছে। আবার কুরিয়ারে পাঠাতেও দিতে হচ্ছে কার্টন প্রতি ৫০ টাকা চাঁদা। এ বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে হাট ইজারদারের লোকজনের কাছে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

গত শনিবার (১২ জুন) বিকেলে সরেজমিনে বানেশ্বর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বানেশ্বর-শিবপুর বাজারের মাঝামাঝি কলাহাটের কাছে একদল যুবক আম বহনকারী বিভিন্ন যানবাহনের গতিরোধ করছে। ওই যুবকদের মধ্যে কয়েকজনের হাতে বানেশ্বর হাটের ৫০ টাকা উল্লেখিত খাজনা আদায়ের রশিদ রয়েছে। এরপর খাজনার নামে গাড়িগুলো থেকে কার্টন প্রতি ৫০ টাকা আদায় করছেন। কেউ খাজনার রশিদ চাইলে গাড়ি প্রতি মাত্র একটি রশিদ দিচ্ছেন। এই নিয়ে উভয় পক্ষকে তর্কবিতর্ক করতে দেখা গেছে।

বাগাতিপাড়া উপজেলা থেকে আগত আরমান আলী নামের একজন ভ্যানচালক বলেন, ‘আমি বানেশ্বর বাজারে এক ভ্যান আম বিক্রি করতে এসেছি। আমার সাথে আমের মালিক নেই। অথচ বাজারে যাওয়ার আগেই এরা আমার নিকট প্রতি কার্টনে ৫০ টাকা হারে খাজনা চাচ্ছেন। আমি তাদের ১০০ টাকা দিতে চেয়েছি তারা সেটা নিবেন না। এখন আমের মালিককে ফোন করা হয়েছে। তিনি টাকা নিয়ে আসলেই আম নিয়ে বাজারে যাব।’

আবু তাহের নামে আরেক আম বিক্রেতা বলেন, ‘আমাদের তিনজনের একটি ব্যবসায়ী গ্রুপ আছে। আমরা অনলাইনের মাধ্যমে আম বিক্রি করি। প্রতিদিন বিভিন্ন বাগান ঘুরে আম কিনে কার্টন করি। এরপর কাস্টমারের চাহিদা অনুসারে সরবরাহ করি। আর আম ঘিরে বেশিরভাগ কুরিয়ার সার্ভিসের অফিসগুলো বানেশ্বরে। সেখানেই আমের কার্টন নিয়ে যেতে হয়। আজ ছয় কার্টন আম পাঠাতে এসে ২৫০ টাকা খাজনা দিতে হয়েছে। অথচ তারা রসিদ দিয়েছে মাত্র ৫০ টাকা মূল্যের। আমরা এখানে আম কেনাবেচে করি না অথচ এভাবেই প্রতিনিয়ত আমাদের নিকট থেকে তারা টাকা আদায় করছে। বিষয়টি হাট ইজারদারকে অবহিত করেও কোনো লাভ হয়নি।

কাউছার নামের অপর একজন বলেন, পুঠিয়া থেকে ভ্যানযোগে দুই কার্টন আম রাজশাহী শহরে আত্মীয়ের বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। পথে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের বানেশ্বর এলাকায় আসামাত্র কিছু লোকজন গতিরোধ করে ১০০ টাকা দাবি করছেন। তারা বলছেন এটা নাকি নিয়ম যে, হাটের উপর দিয়ে আম নিয়ে গেলে টাকা দিতেই হবে। পরে অনেক তদবির করে ৫০ টাকা দিয়ে সুরাহা হয়েছে।

জুয়েল নামের একজন বানেশ্বর হাটের খাজনা আদায়কারী বলেন, ‘আমের মৌসুমের জন্য আমরা ৫০ লাখ টাকায় সাব লীজ নিয়েছি। যার কারণে ওই টাকা তুলতে আম নিয়ে যেই আসুক আমরা কার্টন প্রতি খাজনা নিচ্ছি। আর খাজনা আদায়ের জন্য বানেশ্বর বাজারের চারদিকে লোকজন রাখা হয়েছে।’

শরিফ নামের অপর একজন খাজনা আদায়কারী বলেন, ইজারদারের নির্দেশেই আমরা মহাসড়কের উপর আমের খাজনা নিচ্ছি। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের নিকট থেকে খাজনা নেয়ার নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে ইজারদারের কাছে যান। আমরা খাজনা আদায় করতে এসেছি কাউকে জবাব দিতে নয়।

আম ব্যবসায়ী রাজ্জাক হোসেন বলেন, ‘জেলার এই বৃহৎ আম মোকামে এবার খাজনা আদায়ে নামে চলছে জুলুম। হাট কমিটির লোকজন ক্রেতা-বিক্রতা উভয়ের কাছ থেকে জোর করে মাত্রাতিরিক্ত অর্থে আদায় করছে। যা বিগত বছরগুলো থেকে দ্বিগুণ। এখানে ইজারদার শুধু নামে মাত্র আছেন। পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন একটি সিন্ডিকেট চক্র।’

বানেশ্বর হাট ইজারদার হাজী ওসমান আলী বলেন, ‘আম বাজারের বাইরে খাজনা আদায়ের নিয়ম নেই। আর প্রতি কার্টনে ৫ টাকা হারে খাজনা শুধু ক্রেতারা দেবেন। এর মধ্যে বিক্রেতা বা বানেশ্বর বাজারে আম কুরিয়ার সার্ভিসে বুকিং করতে আসা ব্যক্তিদের নিকট থেকে খাজনা নেয়ার সুযোগ নেই। যদি কেউ নিয়ে থাকে তবে সেটা নিয়ম বর্হিভূত। এ বিষয়গুলো আমার জানা ছিল না। তবে এখন থেকে অতিরিক্ত বা নিয়মের বাইরে কোনো খাজনা আদায় হবে না।’

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাস্মদ আনাছ বলেন, ‘মহাসড়কে আমের গাড়ি থামিয়ে যারা খাজনা নিচ্ছে তারা চাঁদাবাজ। নিয়ম অনুসারে আম চাষি বা বিক্রেতার নিকট থেকে কোনো খাজনা আদায়ের বিধান নেই। আমি সকলের অবগতিতে বলতে চাই ওই চাঁদাবাজদের ধরে পুলিশে দেয়ার জন্য। অথবা আমাকে জানালেও আটককৃত চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //