লালমনিরহাটে কৃষি উপকরণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাট অধিদফতরের উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ প্রকল্পে লালমনিরহাটে বিনামূল্যে পাটচাষিদের মাঝে বীজ, সার বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। চৈত্র মাসের সরকারী বীজ ও সার বিতরণ করা হচ্ছে আষাঢ় মাসে।

লালমনিরহাট পাট অধিদফতর সূত্র জানান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন পাট অধিদফতর উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এ প্রকল্পে ২০১৯ সাল থেকে জেলার পাঁচটি উপজেলা ও দুইটি পৌরসভার সহস্রাধিক চাষিকে সুবিধা দেয়া হয়। এবারেও চলতি পাট মৌসুমে সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় জেলার সাড়ে নয় হাজার পাট চাষির তালিকা করা হয়। এতে সাড়ে নয় হাজার কেজি উন্নত মানের পাট বীজ ও রাসায়নিক সারের বিপরীতে ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। জনপ্রতি পাটচাষি এক কেজি উন্নতমানে পাট বীজ, সেই সাথে ছয় কেজি ইউরিয়া, তিন কেজি টিএসপি ও তিন কেজি এমওপি সার পাওয়ার কথা। এসব সার সরকার অনুমোদিত সার ডিলারের নিকট থেকে ক্রয় করে চাষিদের হাতে সঠিক সময়ে পৌঁছানোর কথা। ফাল্গুনের মাঝামাঝি থেকে চৈত্রের শেষ পর্যন্ত পাটের বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। কিন্তু জ্যৈষ্ঠ মাস পেরিয়ে গেলেও পাট চাষিদের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ শেষ করতে পারেনি তারা। আষাঢ় মাসে এসেও কোনো কোনো ইউনিয়নে চলছে বিতরণ।

শাহ আলম নামে একজন সিনিয়র কৃষিবিদ বলেন, ফাল্গুনের মাঝামাঝি থেকে চৈত্রের শেষ পর্যন্ত পাটের বীজ বপনের একেবারে সঠিক সময়। সঠিক পদ্ধতিতে বীজ বপন ও পরিচর্যা করতে পারলে মিলবে পাট চাষে সফলতা। চৈত্র মাসের পরে যদি কেউ পাট বীজ বপন করেন সেখানে যতই পরিচর্যা করুক না কেন আশানুরুপ সফলতা পাবে না। এদিকে লালমনিরহাট সদর উপজেলাসহ একটি পৌরসভা মিলে দুই হাজার তিনশ চাষির মধ্যে তিনশ জন পাট বীজ উৎপাদনকারী চাষির জন্য রাসায়নিক সারের বিপরীতে চার লাখ ৭৪ হাজার টাকা। আদিতমারী উপজেলায় দুই হাজার পাট চাষির জন্য চার লাখ ১৪ হাজার। কালীগঞ্জ উপজেলায় দুই হাজার দুইশ চাষির মধ্যে দুইশ জন পাট বীজ উৎপাদনকারী জন্য চার লাখ ৫৪ হাজার টাকা। হাতীবান্ধা উপজেলায় এক হাজার পাঁচশ জন চাষির জন্য তিন লাখ ১০ হাজার টাকা ও পাটগ্রাম উপজেলা ও পৌরসভায় এক হাজার পাঁচশ কৃষকের জন্য তিন লাখ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

অভিযোগ উঠেছে, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে বেশ অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন জেলার তিনটি উপজেলার উপ-সহকারী পাট কর্মকর্তারা। এরা হলেন- বিগত বছরেও পাট বীজ ও সার বিতরণে অনিয়মে অভিযুক্ত কালীগঞ্জ উপজেলার উপ-সহকারী পাট কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ও পাটগ্রাম উপজেলার উপ-সহকারী পাট কর্মকর্তা আবু হাসান, হাতীবান্ধা উপজেলার উপ-সহকারী পাট কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম। 

পাট বীজ ও সার বিতরণ কাগজ কলমে ঠিক-ঠাক রাখা হলেও কিছু ইউনিয়নে চাষিদের নামের তালিকায় বেশির ভাগ ভুয়া পাট চাষির নামে বীজ ও সার বিতরণ দেখিয়ে তা কর্মকর্তারা নিজেরাই আত্মসাত করছেন। আবার তালিকায় নাম থাকলেও অনেককে দেয়া হয়নি বীজ ও সার। আর যারা সার পেয়েছেন তাদেরকে ওজনে কম দেয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সাল পাটগ্রাম উপজেলার উপ-সহকারী পাট কর্মকর্তা আবু হাসান ভুয়া পাট চাষিদের নামের তালিকা তৈরি করে তা আত্মসাত করায় উপজেলা কমিটির নিকট ধরা পড়ে। পরবর্তীতে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হাতপা ধরে মাপ চেয়ে বেচে যান। 

অপরদিকে পাটবীজ ও সার বিতরণে অনিয়মে অভিযোগ এনে কালীগঞ্জ উপজেলায় পাট কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা পাট কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ করেন একই উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের নয়জন পাট চাষি। তবে এর আগে ২০২০ সালে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বীজ ও সার আত্মসাতের অভিযোগ হলেও তা রহস্যজনক কারণে তদন্ত হয়নি।

অভিযোগকারী কাকিনা ইউনিয়নের পাট চাষি অনিল চন্দ্র ও মোবারক হোসেন বলেন, পাটবীজ ও সার বিতরণের তালিকায় আমাদের নাম আছে কিন্তু আমরা কোনো পাটবীজ ও সার পাইনি। আমাদের মত অনেক পাটচাষির নাম দিয়ে কর্মকর্তারা সার ও বীজ আত্নসাত করেছে। 

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আ. মান্নান বলেন, উপ-সহকারী পাট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগটি খতিয়ে দেখছি।

তবে অভিযুক্ত তিন উপজেলার উপ-সহকারী পাট কর্মকর্তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, আমরা কমিটির মাধ্যমে পাট বীজ ও সার বিতরণ করেছি। ভুয়া চাষির নাম ও ওজনে সার কম দেয়ার বিষয় জানতে চাইলে তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে বিতরণকৃত পাট চাষিদের নামের তালিকা চাওয়া হলে তা তাদের কাছে নেই, ঢাকা অফিসে জমা দিয়েছেন বলে জানান।

লালমনিরহাট জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আ. সাত্তারের কাছে পাটবীজ, সার, উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ প্রকল্পের বিতরণকৃত চাষিদের তালিকা চাওয়ার হলে তিনি বলেন, সব উপজেলার চাষিদের তালিকা হাতে পাইনি। এবার বিতরণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। 

উপ-সহকারী পাট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা বলেন, পাট চাষির প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে কোনো উপ-সহকারী পাট কর্মকর্তা জড়িত থাকলে পাট অধিদফতর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //