ট্রলারডুবিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১, মরদেহ হস্তান্তর

মাত্র ১০-১৫ মিনিটের পথ পাড়ি দিলেই ট্রলারটি পৌঁছে যেত আনন্দবাজার ঘাটে। এটিই ছিল শেষখেয়া। কিন্তু এর আগেই বালুবোঝাই ট্রলারের সাথে সংঘর্ষে ডুবে যায় শতাধিক যাত্রীবোঝাই ট্রলারডুবে মৃত্যু হয় ২১ জনের। এছাড়া নিখোঁজ হন অর্ধশত যাত্রী। 

মর্মান্তিক এ ঘটনাটি গতকাল শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বিকেল সোয়া ৫টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের লইসকা বিলে ঘটে। যাত্রীবাহী ট্রলারটি বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ঘাট থেকে জেলা শহরের আনন্দবাজার ঘাটের দিকে আসছিল।

নৌ-দুর্ঘটনায় মৃতদের মরদেহ রাতেই তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান মরদেহগুলো স্বজনদের বুঝিয়ে দেন। এসময় তার সাথে জেলার পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান ছাড়াও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। রাতে ১৭ জনের মরদেহ বুঝিয়ে দেয়া হয়। এসময় মরদেহ পরিবহনের জন্যে স্বজনদের কাছে ২০ হাজার করে টাকা দেয়া হয়। এই নৌ-দুর্ঘটনায় রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ২১ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়। 

নিহতদের মধ্যে ১৬ জনের পরিচয় জানা গেছে। এরা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরশহরের পৈরতলা এলাকার আবু সাঈদের স্ত্রী মোমেনা বেগম (৫৫) ও ফারুক মিয়ার স্ত্রী কাজল বেগম (৪০), দাতিয়ারা এলাকার মোবারক মিয়ার মেয়ে তাসফিয়া মিম (১২), সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের সাদেরকপুর গ্রামের মুরাদ হোসেনের ছেলে তানভীর (৮) ও চিলোকুট গ্রামের আব্দুল্লাহ মিয়ার শিশু কন্যা তাকুয়া (৮), নরসিংসার গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে সাজিম (৭), ভাটপাড়া গ্রামের ঝারু মিয়ার মেয়ে শারমিন (১৮), বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের জহিরুল হকের ছেলে আরিফ বিল্লাহ (২০), বেড়াগাঁও গ্রামের মৃত মালু মিয়ার স্ত্রী মঞ্জু বেগম (৬০), জজ মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪৭) এবং তার মেয়ে মুন্নি (১০) ও আব্দুল হাসিমের স্ত্রী কমলা বেগম (৫২), নূরপুর গ্রামের মৃত রাজ্জাক মিয়ার স্ত্রী মিনারা বেগম (৫০), আদমপুর গ্রামের অখিল বিশ্বাসের স্ত্রী অঞ্জনী বিশ্বাস (৩০) ও পরিমল বিশ্বাসের মেয়ে তিথিবা বিশ্বাস (২) এবং ময়মনসিংহের খোকন মিয়ার স্ত্রী ঝর্ণা বেগমের (৪৫)।

ট্রলারডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রী আলী আক্তার রেজভী জানান, ট্রলারটি লইসকা বিল আসার পর বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বালুবোঝাই ট্রলারের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে যাত্রীবোঝাই ট্রলারটি ডুবে যায়। কয়েকজন সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও অনেকেই পানিতে তলিয়ে যান।

লইসকা বিলে নিখোঁজ বড়ভাইয়ের জন্য আহাজারি করা এনামুল ইসলাম জানান, তার ভাই সিরাজুল ইসলাম মনিপুর ঘাট থেকে ট্রলারটিতে ওঠেন আনন্দবাজারে যাওয়ার জন্য। কিন্তু কিছুদূর যাওয়া  পরই ট্রলারটি ডুবে যায়। এতে তার ভাই নিখোঁজ হন।

বিজয়নগর উপজেলার মুকুন্দপুর গ্রামের জহিরুল ইসলাম জানান, নববধু শারমিন আক্তারকে নিয়ে ট্রলারে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন তিনি। ট্রলারটি ডুবে যাওয়ার সময় তিনি সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও স্ত্রীকে টেনে তুলতে পারেননি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খাঁন জানান, নিখোঁজদের উদ্ধারে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা চেষ্টা চালাচ্ছেন। নিহতদের প্রত্যেকের দাফনের জন্য পরিবারের কাছে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

রাতে দুর্ঘটনায় তলিয়ে যাওয়া নৌকাটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ভারী যন্ত্রযানের সহায়তায় নৌকাটি আজ শনিবার (২৮ আগস্ট) দিনেরবেলা উদ্ধার করা হবে। তবে উল্টে যাওয়া নৌকাটির ভেতরে ঢুকে ডুবুরীরা আর কোনো মরদেহ আছে কিনা তা রাতেই খুঁজে দেখেন।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //