সবুজেঘেরা দেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী দর্শনা রেলওয়ে স্টেশনটি আগে ছিল বেশ অপরিষ্কার। স্টেশনের চারদিক ছিল ঝোঁপ-জঙ্গলে ভরা ও অন্ধকারে নিমজ্জিত; কিন্তু বর্তমানে সেই চিত্র একেবারে ভিন্ন। এ রেলওয়ে স্টেশন এখন ঝকঝকে তকতকে, চারদিকে সবুজ গাছপালায় ঘেরা বেষ্টনি আর ঝলমলে আলোয় আলোকিত। স্টেশনটিতে এক দারুণ পরিবেশ বিরাজ করছে। 

এটি সম্ভব হয়েছে বর্তমান স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট মীর মো. লিয়াকত আলীসহ কর্মচারীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দর্শনা রেলওয়ে স্টেশনের পরিবেশ পাল্টে গেছে। ১৮৬১ সালের ১৫ নভেম্বর ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে ভারতের কলকাতা ও বাংলাদেশের গোয়ালন্দ রেল যোগাযোগ চালু করলে দর্শনা রেলওয়ে স্টেশনটি চালু হয়। এটিই দেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন। এটা আমদানি-রফতানি শুল্ক স্টেশন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ স্টেশনের ওপর দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন যাতায়াত করে এবং ভারত থেকে প্রতিদিনই ট্রেনের ওয়াগনে করে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করা হয়। 

দর্শনা রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, দু’পাশে প্ল্যাটফর্মের ফাঁকা জায়গাটুকু সম্পূর্ণ কাজে লাগিয়েছেন। প্রথমে তারা খালি জায়গায় ফুলবাগান করেন; কিন্তু বাগান পরিচর্যার জন্য জনবল ও ফুলের চারা কিনে বাগান টিকিয়ে রাখার সামর্থ্য না থাকায়, সেখান থেকে সরে আসতে হয়েছে তাদের। ওই স্থানটিতে লাগানো হয় আম, কাঁঠাল, বেল, নিম, দেবদারু, শিউলি ও বকুল ফুল গাছ। গাছগুলো ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। ফলদ গাছগুলোতে ফল ধরা শুরু হয়েছে। সবুজের সমারোহে ঘেরা গোটা স্টেশন চত্বরটি পাখির কলতানে মুখরিত থাকে। অন্যরকম পরিবেশ বিরাজ করছে স্টেশনটিতে। দিনের বেশিরভাগ সময়ই পরিচ্ছন্নকর্মীরা স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম পরিচ্ছন্ন করে রাখেন। কোনো প্রকার ময়লা-আবর্জনা জমতে দেন না এখানে। এই প্ল্যাটফর্মে প্রতিদিন সকাল-বিকেল ও সন্ধ্যায় সাধারণ নারী-পুরুষ হাঁটাহাঁটি করতে আসেন। নিরাপত্তা বেষ্টনিতে ঘেরা এই মনোরম পরিবেশে হাঁটাহাঁটি করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বলে তারা জানান। তাছাড়া অনেকে এখানে নিরিবিলি বসে সময় কাটাতেও আসেন।

দর্শনার এক রেলযাত্রী মাহফুজ উদ্দীন খান পেশায় সাংবাদিক। তিনি বলেন, সারাদেশে রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে দর্শনা রেলওয়ে স্টেশনের মতো পরিবেশ থাকলে যাত্রীরা রেল ভ্রমণে আকৃষ্ট হবেন। 

আরেকজন রেলযাত্রী এনজিও কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, এ রেলস্টেশনে প্রবেশ করলেই মনটা জুড়িয়ে যায়। কোনো প্রকার হই হট্টগোল, ঠেলাঠেলি নেই। এখানে সবই সুন্দর পরিবেশে পরিচালিত হচ্ছে। এরকম পরিবেশ অন্যান্য রেলস্টেশনে হওয়া প্রয়োজন। তাহলে রেল ভ্রমণের প্রতি যাত্রীরা আরও বেশি আগ্রহী হবেন।

রেলস্টেশনে হাঁটতে আসা গৃহবধূ রিনা আক্তারের সঙ্গে কথা হয়। দর্শনাতে তো আরও হাঁটার জায়গা আছে, সেখানে না গিয়ে এখানে কেন এসেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ রেলস্টেশনটি মহিলাদের জন্য যথেষ্ট নিরাপদ। তাছাড়া এখানকার সবুজ গাছপালাবেষ্টিত পরিবেশে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। সে জন্যই এখানে আসি।

দর্শনা রেলস্টেশনের স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট মীর মো. লিয়াকত আলী বলেন, ২০১৫ সালে এখানে যোগ দেওয়ার পর ঐতিহ্যবাহী এ রেলওয়ে স্টেশনটির পরিবেশ বেশ অপরিচ্ছন্ন ছিল। এখানকার চারপাশ খোলা ছিল। রাত হলেই স্টেশনটি অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যেত। বর্তমান পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বেগ পেতে হয়েছে। এখানকার কর্মচারীদের যথেষ্ট আন্তরিকতা ও সবার প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে। এ স্টেশনে প্রথম পর্যায়ে অনেক কিছুরই অভাব ছিল। রেলস্টেশনের চারপাশে গাছপালা থাকায় সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে। যখন দেখি ছায়াঘেরা পরিবেশে মানুষ তাদের সারাদিনের কর্ম সেরে এসে বিশ্রাম নেয়, তখন খুব ভালো লাগে। আমাদের মতো অন্যরা এটাকে অনুকরণ করলে রেলের প্রতি যাত্রীদের আগ্রহ বাড়বে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //