বাংলাদেশ ছাড়বে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর পরিবার

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গাদের শীর্ষস্থানীয় নেতা মো. মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল তার পরিবারের সদস্যরা। মুহিবুল্লাহর পরিবারসহ ৯ পরিবারকে অন্যত্র একটি সেন্টারে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে তারা বাংলাদেশ-মিয়ানমার ছাড়া অন্য কোনো দেশে (থার্ড কান্ট্রি) আশ্রয়ের আবেদন করেছেন।

জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে সম্প্রতি সংশ্লিষ্টদের কাছে এই আবেদন করেছেন তারা। তবে তারা কোন দেশে যাচ্ছেন বা যেতে চান সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।

মুহিবুল্লাহর পরিবার ছাড়াও আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ নওখিমসহ সংগঠনের কিছু সদস্য এবং মুহিবুল্লাহর ঘনিষ্ঠসহ মোট ১১টি পরিবার বাংলাদেশ-মিয়ানমারের বাইরে অন্য কোনো দেশের আশ্রয় নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।

এ বিষয়ে রবিবার (১৭ অক্টোবর) শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, আমাদের কাছে মুহিবুল্লাহর পরিবার কোনো আবেদন করেনি। তাছাড়া বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারের বাইরে। তবে যদি তারা কোনো দেশের সাথে যোগাযোগ করে সেখানে যেতে চায় সেক্ষেত্রে সেদেশের সাথে সকল প্রক্রিয়া শেষে কাগজপত্রগুলো পররাষ্ট্র দফতর থেকে আমাদের কাছে আসবে। তারপরই বলা সম্ভব, তারা অন্য কোনো দেশে যাচ্ছেন কিনা।

এদিকে মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করার পর থেকে তার ছোট ভাই হাবিব উল্লাহ, স্ত্রী নাসিমা খাতুনসহ অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদের অপরিচিত নম্বর থেকে মোবাইলে টেক্সট ও ভয়েজ মেসেজ পাঠিয়ে প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে পুলিশ বলছে, এসব হুমকির ঘটনা কেন এবং কারা ঘটাচ্ছে তা নিয়েও কাজ করছেন মামলাটির তদন্তকারীরা।

মুহিবুল্লাহর পরিবার ও এআরএসপিএইচ সংগঠনে নেতারা জানান, মুহিবুল্লাহ হত্যার পর তারা সবাই ক্যাম্পের খুব ভয়ভীতির মধ্য ছিলেন। এরপর তারা নিরাপত্তার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। এরপরও মুহিবুল্লাহর পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার তাদের ক্যাম্প থেকে সরিয়ে অন্য একটি জায়গায় নেয়া হয়েছে।

এর মধ্যেই মুহিবুল্লাহ পরিবার, আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) সংগঠনের কিছু সদস্যসহ মোট ১১টি পরিবার বাংলাদেশ-মিয়ানমার ছাড়া অন্য কোনো দেশে বসতি স্থাপন করতে চেয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়, জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার এবং যুক্তরাষ্ট্র বরাবর আবেদন করেন। আবেদনে তারা যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া বা কানাডা নাম উল্লেখ করেছেন। এসব বিষয়ে আলোচনায় লিড করছেন এআরএসপিএইচ-এর অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ নওখিম। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

তবে মুহিবুল্লাহর ভাগনে এবং আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ)-এর মুখপাত্র রশিদ উল্লাহ বলেন, জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে দুই দফায় ১১টি পরিবার থার্ড কান্ট্রি যেতে চেয়ে ত্রাণ শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়, জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার এবং যুক্তরাষ্ট্রে আবেদন করেছি। তার মধ্য আমরা তিন দেশের কথা উল্লেখ করেছি। এসব দেশের সাথে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। তবে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তাছাড়া ইতোমধ্যে আমাদের ক্যাম্প থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সেখানে আমরা ক্যাম্প থেকে ভালো আছি।

‘থার্ড কান্ট্রি’-তে  যাবার বিষয়টি আমাদের জানা নেই উল্লেখ করে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার নাঈমুল হক বলেন, মুহিবুল্লাহর পরিবারসহ কয়েকজনকে ক্যাম্পের ভেতরে একটি সেন্টারে সরিয়ে রাখা হয়েছে। বিষয়টি এমন-না যে, নিরাপত্তাজনিত কারণে তাদের সরিয়ে রাখা হয়েছে। মূলত মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল থেকে তাদের সরিয়ে রাখা হয়। যেহেতু ‘ক্রাইম সিন’ এলাকায় লোকজন যাওয়া আসা নিষিদ্ধ। তাদের সেখানে আমরা পূর্ণ-নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //