চট্টগ্রামে ফ্লাইওভারের পিলারে ফাটল, যা বললেন মেয়র

নির্মাণের চার বছরের মাথায় চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাটে এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের দুটি পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ কারণে ফ্লাইওভারের ওই অংশ দিয়ে সোমবার (২৫ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টা থেকে আরাকান সড়কমুখী যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।

‘নির্মাণত্রুটির’ কারণে চট্টগ্রাম নগরের এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের র‍্যাম্পের পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।

অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মনে করেন, নকশাগত ত্রুটি বা নির্মাণত্রুটির কারণে এই ফাটল দেখা দিতে পারে। ওভারলোডের গাড়ি চলাচলের কারণেও এমনটা হতে পারে বলেও প্রাথমিক ধারণা তার।

মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মেয়র রেজাউল। এসময় তার সঙ্গে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তারা।

সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমি তো প্রকৌশলী না, ফাটলের সুনির্দিষ্ট কারণ আমি বলতে পারবো না। সাধারণভাবে যেটা বলতে চাই, নিশ্চয় নির্মাণে ত্রুটি ছিলো। যার ফলে এই ফাটল দেখা দিয়েছে। এখানে প্রকৌশল দৃষ্টিকোণ থেকে কি হয়েছে, না হয়েছে এটা আমার থেকে আমাদের প্রকৌশলীরা ভালো বলতে পারবেন। তারা কারিগরি বিষয় ভালো জানেন।

তিনি বলেন, আমরা র‌্যাম্পে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি। এটি আমরা নির্মাণ করিনি, এটা নির্মাণ করেছে সিডিএ’র অধীনে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স। ব্যবস্থা নেবে সিডিএ। তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে আজকে আমরা সিডিএকে চিঠি দেবো। যে সমস্ত ঠিকাদার কাজ করেছে তাদের নির্মাণে কোনো ত্রুটি আছে কি না তা তদন্ত করে বের করে ব্যবস্থা নেবে। আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করবো।

সিটি মেয়র বলেন, যেকোনো সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। যেভাবে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে আমি নিজেও দেখে হতবাক হয়েছি। এ ফ্লাইওভারে আগেও একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। গার্ডার পড়ে অনেক লোক মারা গিয়েছিলো।

চসিক-এর প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, কোনো একটা ত্রুটি অবশ্যই ছিলো। নয়তো ক্র্যাক (ফাটল) দেখা দিতো না। দুটি কারণে ফাটল দেখা দিতে পারে। একটি নকশাগত ত্রুটি, অন্যটি নির্মাণ ত্রুটি। কি কারণে হয়েছে সেটা খালি চোখে দেখে এ মুহূর্তে বলা যাবে না। তবে এটা ওভারলোডের গাড়ি চলাচলের কারণে হয়েছে।

তিনি বলেন, নির্মাণে যুক্ত থাকা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সের সংগে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে, এই র‌্যাম্পটি মূল নকশায় ছিলো না। পরবর্তীতে এটা যুক্ত করা হয়েছে। এজন্য নকশায় ত্রুটি থাকতে পারে।

নগরের আরাকান সড়কের পাশেই কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকা, বাস টার্মিনাল ও চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা। কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকার কারখানাগুলোর পণ্যবাহী যানবাহন এই র‍্যাম্পের ওপর দিয়ে চলাচল করে।

যানজট নিরসনে নগরের শুলকবহর থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত এক কিলোমিটার এলাকায় এম এ মান্নান ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ফ্লাইওভারটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। নির্মাণকাজ চলাকালে ২০১২ সালের নভেম্বরে গার্ডার ধসে ১৪ জন নিহত হন। ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন করা হয় ২০১৩ সালের অক্টোবরে। উদ্বোধনের পর ফ্লাইওভারটি কার্যকর না হওয়ায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আরাকান সড়কমুখী র‍্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সকে দিয়ে এই কাজ করানো হয়।

চার বছর আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ৩২৬ মিটার দীর্ঘ ও ৬ দশমিক ৭ মিটার চওড়া র‍্যাম্পটি নির্মাণ শেষে যান চলাচলের জন্য ফ্লাইওভারটি খুলে দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সিডিএ নগরের তিনটি উড়ালসড়ক ও একটি ওভারপাস রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে।

স্ট্রাকচারাল ত্রুটির কারণে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনভিজ্ঞতার কারণে বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ইঞ্জিনিয়ার দেলোয়ার মজুমদার।

তবে এ বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কেউই মুখ খুলতে নারাজ। আর কতো প্রাণ গেলে টনক নড়বে কর্তৃপক্ষের- এমন প্রশ্ন নগরবাসীর।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //