‘আমি তানিয়া নূর, জ্ঞান হওয়ার পর থেকে এক চোখে দেখি। সোজা ভাষায় আমি অন্ধ। খুব ছোট বয়সে, দুই বেণি দোলানো ছোট্ট সেই মেয়েটা জানত মানুষ এক চোখে দেখে। বন্ধুরা বলল—না তো সবাই দুই চোখে দেখে। তাহলে আমিই দেখি না!’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তানিয়া নূরের (৩৮) নিজের এক চোখের দৃষ্টিশূন্যতার জন্য একটি সরকারি সংস্থার লোকজনের কাছ থেকে চরম অসংবেদনশীল আচরণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন।
তানিয়ার অভিযোগ, ১১ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে ই-পাসপোর্টের জন্য চোখের রেটিনা স্ক্যান করার সময় তার এক চোখের দৃষ্টিহীনতা নিয়ে তিনি রীতিমতো হেনস্তার শিকার হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তাকে চিকিৎসকের কাছ থেকে ‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী’ হিসেবে প্রমাণপত্র আনতে হয়েছে। কারণ, অধিদপ্তরের কর্মীরা তাকে জানিয়েছিলেন, এই সনদ ছাড়া তার ই-পাসপোর্ট আবেদনপত্র নেওয়া হবে না। কিন্তু ই-পাসপোর্টের ফরমে কোথাও উল্লেখ নেই যে প্রতিবন্ধিতা থাকলে, তা প্রমাণের সনদ দিতে হবে।
তানিয়া লিখেছেন, তাকে শেষমেশ চিকিৎসকের কাছ থেকে অন্ধত্বের প্রমাণ সংগ্রহ করে আনতে হয়েছে। আর জীবনে এই প্রথম তাকে এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কাঁদতে হয়েছে। ঘটনাটির পর থেকে তিনি একধরনের মানসিক বিষাদের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধুরীর মতে, ওই নারীর (তানিয়া) কাছে প্রতিবন্ধিতা–বিষয়ক প্রমাণ না চেয়ে বরং বিষয়টি বুঝিয়ে বললেই অপ্রীতিকর এ ঘটনা ঘটত না।
তানিয়া রাজধানীর ধানমন্ডির বাসিন্দা। বাবার নাম এ কে এম নুরুননবী। মায়ের নাম সামসাদ নবী। দুই ভাই–বোনের মধ্যে তানিয়া ছোট। তিনি রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়েছেন। ২০০১ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে মানবিক বিভাগে সম্মিলিত মেধাতালিকায় তৃতীয় হন। অনার্স-মাস্টার্স করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে। এখন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে মাস্টার্স করছেন; পাশাপাশি কাজ করছেন আই সোশ্যাল নামে একটি বেসরকারি সামাজিক সেবা উদ্যোগে, যোগাযোগপ্রধান হিসেবে।
তানিয়া জানান, ছোটবেলায় মায়ের কাছ থেকে প্রথম জানতে পারেন যে তিনি ডান চোখে দেখেন না। ১০ ও ১৪ মাস বয়সে তাঁর চোখে দুটি অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচারে চোখ অবিকৃত থাকে। কিন্তু তিনি দৃষ্টি হারান। মা–বাবা ছোট থেকেই তাকে বুঝিয়েছেন যে এক চোখে না দেখার জন্য তিনি যেন কখনোই নিজেকে অক্ষম মনে না করেন। ফলে, একটা ইতিবাচক ভাবনা নিয়ে তিনি বড় হয়েছেন। তার কোনো প্রতিবন্ধিতা নেই—এমনটাই বিশ্বাস করে এসেছেন। কিন্তু ই-পাসপোর্ট করতে গিয়ে তাঁর বিশ্বাস ধাক্কা খেয়েছে।