পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না রেখে সড়ক নির্মাণ, ৭০০ একর জমি জলাবদ্ধ

কয়েকটি গ্রামের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি সড়কের। দাবির প্রেক্ষিতে সড়কটি এখন দৃশ্যমান। সড়ক নির্মাণের ফলে যোগাযোগে ব্যাপক উন্নতি হলেও এলাকার কৃষি নির্ভর অসংখ্য কৃষকের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই রাস্তাটি। 

পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখে সড়ক নির্মাণ করায় টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বাসাইল-পাথরঘাটা সড়কের পূর্বপৌলী মৌজায় কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সময়মতো পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় এলাকার কৃষকের প্রায় ৭০০ একর কৃষিজমি এখনও পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

জানা যায়, বাসাইল-পাথরঘাটা সড়ক নির্মাণের জন্য কয়েকটি এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে সড়কটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণের সময় এ সড়কের নলগারিয়া বাজার এলাকার কালভার্টটি ভেঙে সেখানে মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়। এজন্য অসংখ্য কৃষকের আবাদি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। 


গত তিন বছর ধরে এই জমিগুলোতে সরিষার আবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। যেখানে এ সময় দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ জোড়ে সরিষা ফুলের হাসি থাকার কথা সেখানে কৃষিমাঠ জোড়ে জলে ভাসা কচুরি পানার ফুলে ভরে আছে এসব ফসলি জমি। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় দু’ফসলি জমিগুলো এখন একফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। সরিষার আবাদ না করতে পেরে অসংখ্য কৃষক চরম বিপাকে পড়েছেন। 

পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সচল করার লক্ষ্যে এলাকার ভুক্তভোগী কৃষক ও জমির মালিকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর একটি আবেদন দিয়েছেন। কিন্তু কোনও প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা। এমতাবস্থায় চরম হতাশা দেখা দিয়েছে এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল হেসেন বলেন, ‘পূর্বপৌলী মৌজার শতশত একর জমির পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি কালভার্ট ছিল। তখন সময় মতো পানি নিষ্কাশন হতো। রাস্তা নির্মাণের সময় কালভার্টটি ভেঙে ফেলা হয়। তারপর পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখেই রাস্তা নির্মাণ কাজ শেষ করে। এতে করে ছয় থেকে সাতশ’ একর জমিতে তিন বছর যাবৎ জলাবদ্ধতার কবলে রয়েছে। ফলে সরিষার আবাদ করতে পারছে না কৃষকরা। জলাবদ্ধতার কারণে আগামী বুরো মৌসুমের বীজতলা তৈরি করতেও পারছেন না।’  


কৃষক আব্দুল গনি মিয়া বলেন, ‘সড়ক নির্মাণের আগে এসব জমির পানি নিষ্কাশনে জন্য এখানে একটি কালভার্ট চুঙ্গি ছিল। তখন যথাসময়ে এ জমির পানি বেড়িয়ে যেত। পুরো মাঠে হতো সরিষার আবাদ। একর প্রতি প্রায় ২০ থেকে ২৫ মন পর্যন্ত সরিষা উৎপাদন হতো। আমারও আট একর জমিতে পানি রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সড়ক নির্মাণের সময় সেই কালভার্ট-চুঙ্গি ভেঙে ফেলে ঠিকাদারের লোকজন। পরে সেখানে কালভার্ট চুঙ্গি নির্মাণ না করেই সড়ক ভরাট করা হয়। এ কারণে দু’ফসলি জমিগুলো বিগত তিন বছর ধরে সরিষার আবাদ করতে পারছি না। এছাড়াও জমিতে পানি থাকায় ইরি-বুরো আবাদের জন্য বীজতলাও তৈরি করতেও পারছি না।’ 

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হাছেন মিয়া, ইসমাইল হোসেন, আনোয়ার হোসেন, খুসিমোহন সরকার, গনেশচন্দ্র মন্ডলসহ একাধিক কৃষক বলেন, পূর্বপৌলী মৌজায় প্রায় সাতশ একর কৃষি জমিতে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে পুরো মৌজায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে শতশত কৃষক চাষাবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছে। গত দু-তিন বছর ধরে ওই চকের এই কৃষি জমি অনাবাদি পড়ে আছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য স্থানীয়ভাবে অনেক চেষ্টা করা হলেও কোনও উপকার হয়নি। তাই আমরা উপজেলা পরিষদের চেয়াম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বরাবর লিখিতভাবে একটি আববেদন দিয়েছি।


কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ খান বলেন, পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে অপরিকল্পিতভাবে সড়ক নির্মাণ করায় ওই এলাকার কয়েকশ একর আবাদী জমি তিন বছর ধরে অনাবাদি পড়ে আছে। এতে এলাকার অসংখ্য কৃষক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এলাকার কৃষকদের পথে বসা ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না। তাই দ্রুত এখানে একটি কালভার্ট নিমাণের জন্য দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ের প্রকৌশলী আব্দুল জলিল বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে সম্ভব হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখে সড়ক নির্মাণ ওই এলাকার কৃষকদের বিপাকে ফেলে দিয়েছে। বিষয়টি এতদিন আমাকে কেউ জানায়নি। জানার পর প্রাথমিকভাবে একটি পাইপ কালভার্ট নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও ওই এলাকার কৃষকদের বাঁচাতে স্থায়ীভাবে পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন বলেন, আমি সবে মাত্র যোগদান করেছি। বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //