মুক্তির আশায় শহরে এসে ঠাঁই হয় অন্ধকারে

আয়ের আশায় ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে কিংবা প্রেমিক বা স্বামীর প্রতারণার শিকার হয়ে লোকনিন্দা থেকে রেহাই পেতে, দালালের কথায় ভুলে শহরে আসে তারা ভালো বেতনে চাকরির লোভে। মুক্তি পাওয়া হয় না তাদের; উল্টো অন্ধকারের চোরাকুঠুরিতে ঠাঁই হয়। নগরীর অভিজাত এলাকা খুলশী, ডবলমুরিং, চান্দগাঁও, হালিশহর, পাঁচলাইশ, পাহাড়তলী, পতেঙ্গা, ইপিজেডসহ বিভিন্ন থানা এলাকায় ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে অথবা হোটেলের রুম ভাড়া করে একাধিক চক্র দালালদের কাছ থেকে এদের কিনে নেয়। এরপর বাধ্য করে দেহ ব্যবসায় নামতে। 

অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের ডাকসাইটে কর্মকর্তাদের প্রশ্রয়ে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে চলছে এ ব্যবসা। প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকায় এসব ফ্ল্যাট বাড়িতে র‌্যাব কিংবা পুলিশের অভিযান চলে কদাচিৎ। অত্যন্ত গোপনে চলতে            থাকা এ ব্যবসার কথা জানাজানি হলে এলাকাবাসীর চাপের মুখে বাসা বদলাতে বাধ্য হয় তারা। তখন নতুন এলাকায় নতুন পরিচয়ে পুরনো ব্যবসা জমিয়ে তুলে কিছু দিনের মধ্যেই। 

এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, এটা এখন খুবই বেড়ে গেছে। আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে এ অপরাধ বন্ধ করা যায়। 

উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, এসিড সন্ত্রাস দমন আইনের কঠোর প্রয়োগের ফলে এ অপরাধ বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। একইভাবে যারা এসব মেয়েকে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করছে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ যদি মানব পাচার আইন অথবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে তাহলে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি হতে বাধ্য। এ ধরনের কয়েকটি নজির পুলিশ সৃষ্টি করলে এ ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেত; কিন্তু অভিযানে যে মেয়েগুলোকে ধরা হয়, তাদের সিএমপি অ্যাক্টে পুলিশ ‘পতিতা’ বলে আদালতে চালান দেয়, যা অমানবিক। এর ফলে দালালরা আদালতে ৫শ’-৬শ’ টাকা জরিমানা দিয়ে মেয়েগুলোকে মুক্ত করে নিয়ে পুরনো ব্যবসায় ফিরিয়ে নেয়।

সর্বশেষ গত ৫ জানুয়ারি নগরীর চান্দগাঁওয়ে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি করানোর অভিযোগে সংঘবদ্ধ চক্রের সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। বহদ্দারহাট এসএ হোটেল থেকে তাদের আটক করা হয়। 

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈনুর রহমান সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, বহদ্দারহাট এলাকায় একটি হোটেলে তল্লাশি চালিয়ে তিনজন নারীসহ সাত জনকে আটক করা হয়েছে। হোটেল মালিকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ দমন আইনে মামলা করা হয়েছে।

গত ১৫ ডিসেম্বর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মেয়েদের এনে অসামাজিক কাজে বাধ্য করানোর মূলহোতাসহ ৬ জনকে আটক করে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম। এ সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক তিন কিশোরীসহ ৪ ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৭-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নিয়াজ মোহাম্মদ চপল। 

চাকরির প্রলোভনে এনে একটি ভাড়া বাসায় আটকে রেখে দুই তরুণীকে দিয়ে দীর্ঘদিন পতিতাবৃত্তি করাচ্ছিল একটি চক্র। এই তরুণীরা পরে কৌশলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে তাদের উদ্ধার করতে অনুরোধ করেন। পরে গত ৫ সেপ্টেম্বর পাহাড়তলী থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। ৩ আগস্ট পাহাড়তলী থানার দক্ষিণ কাট্টলী এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে বিভিন্ন বয়সী তরুণীদের আটকে রেখে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি করানোর অভিযোগে নারীসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে সিএমপির গোয়েন্দা দক্ষিণ বিভাগ। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //