তিস্তার সেচ প্রকল্পে রেকর্ড লক্ষ্যমাত্রা

লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পে বোরো চাষে রেকর্ড পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার তিস্তা সেচ প্রকল্পের পানি দিয়ে তিন জেলার ১২টি উপজেলার পাঁচ লাখ ১২হাজার কৃষক মোট ৫৩ হাজার হেক্টর জমি বোরো চাষের জন্য প্রস্তুত করছেন। 

তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে ১৮ হাজার হেক্টর, ২০১৫-১৬ সালে ১০ হাজার হেক্টর, ২০১৭ সালে আট হাজার হেক্টর, ২০১৮ সালে ৩৫ হাজার হেক্টর এবং ২০১৯-২০ সালে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করে। কিন্তু পর্যাপ্ত পানি থাকায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৩হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ২৪২টি পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সহযোগিতায় নীলফামারী সদর, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ ও সৈয়দপুর, রংপুর জেলার সদর, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, খানসামা ও চিরিরবন্দর উপজেলার কমান্ড এলাকায় রোটেশন অনুযায়ী সেচের পানি দেওয়া হবে। 

সেচ প্রকল্প কর্মকর্তারা বলেন, ২০০৩ সালে সেচ কার্যক্রম শুরু করে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প। টারশিয়ারী ও সেকেন্ডারি মিলে ৭৬০ কিলোমিটার ক্যানেল থেকে এই সেচ সুবিধা দেওয়া হয় সুবিধাভোগী কৃষকদের। এতে কৃষকদের কাছ থেকে বছরে বিঘা প্রতি ১৬০ টাকা এবং একর প্রতি (তিন বিঘা) ৪৮০ টাকা নেওয়া হয়।

উপজেলার পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সেচ পাম্প বা শ্যালো মেশিন দিয়ে বোরো আবাদে খরচ হয় একর প্রতি ১০হাজার টাকা। সেখানে তিস্তা সেচ প্রকল্পে মাত্র ৪৮০ টাকায় সেচ সুবিধা পাচ্ছেন কৃষকরা। 

জলঢাকা উপজেলার পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি খাইরুল ইসলাম বলেন, আমরা তিস্তার পানি দিয়েই বোরো আবাদ করি। সমিতির সদস্যরা কম খরচেই পানি পাচ্ছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া বিভাগের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী শামীম বলেন, আমরা পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। যেখানে যতটুকু পানি প্রয়োজন ঠিক সেখানে ততটুকু পানি দিতে প্রস্তুত রয়েছি আমরা। ভালো ফলনের জন্য পানির ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে লক্ষ্যমাত্রা নিরুপণে ব্যাঘাত ঘটেছিল। সেগুলো আমরা কাটিয়ে উঠেছি। ২৪২টি সমিতি রয়েছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে রোটেশন অনুযায়ী পানি দেওয়া হবে তিস্তা কমান্ড এলাকায়। 

তিনি আরও বলেন, তিস্তা ব্যারেজ সেচে ১৫ হাজার কিউসেক পানি রয়েছে। যা দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হওয়া এলাকাগুলোতে পানি দেওয়া সম্ভব। নদীতে ফেব্রুয়ারির দিকে পানি কমতে থাকে। তারপরও রোটেশন অনুযায়ী দিলে সমস্যা হয় না। কারণ আবাদটা আমরা জানুয়ারির প্রথম থেকে শুরুর কথা বলেছি কৃষকদের। সে অনুযায়ী কাজও হচ্ছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশফাউদৌলা বলেন, এবার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আগামীবার আরও বেশি এলাকায় দেওয়ার চেষ্টা থাকবে। কারণ আগের চেয়ে এখন পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, সেচ প্রকল্প এলাকায় পুরো মৌসুম মনিটরিং করা হবে। এজন্য দায়িত্ব পালন করবেন আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশেষ করে কেউ যাতে পাইপিং করে পানি নিতে না পারেন তার জন্যও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //