দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকল

চিনি নয়, মদেই লাভ

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের ডিস্টিলারি বিভাগ থেকে বিলেতি ও বাংলা মদ এবং রেক্টিফায়েড স্পিরিটসহ ৬টি পণ্য বিক্রি করে লোকসান কাটিয়ে ১৭০ কোটি ২২ লাখ টাকা আয় করেছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। 

চিনিকলের ডিস্টিলারি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত অর্থ বছরে ৯৪ হাজার ৭০ বক্স বিলেতি ও ৫ লাখ ৪৭ হাজার ২৬৫ লিটার বাংলা মদ বিক্রি হয়। চিনিকলের লোকসান কাটিয়ে ১৭০ কোটি ২২ লাখ টাকা বিলেতি ও বাংলা মদসহ ডিস্টিলারি বিভাগের ৬টি পণ্য বিক্রি করে আয় হয়। চিনিকলের ডিস্টিলারি বিভাগ থেকে ৪২ কোটি ৫২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ভ্যাটসহ অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে ১২৭ কোটি ৭০ লাখ ৫১ হাজার টাকা লাভ হয়েছে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে। এ প্রতিষ্ঠানটি ৮৪ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ লাভ করে। 

২০২০-২১ অর্থ বছরে ডিস্টিলারি বিভাগ থেকে মোট আয় হয় ১৭৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সরকারকে ৭৩ কোটি ২০ লাখ টাকা রাজস্ব দিয়েও লাভ হয় ১০৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের ৫ ইউনিটসহ ডিস্টিলারি বিভাগ ও জৈব সার কারখানা থেকে এ লাভ হয়। ডিস্টিলারি বিভাগের লাভের টাকা দিয়ে অন্য ইউনিটের লোকসান মিটিয়েও প্রায় ৬০-৭০ কোটি টাকা লাভ হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, চিনিকলের বাণিজ্যিক খামার ও পরীক্ষামূলক চালু খামারে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়। ২০২১-২২ অর্থ বছরে চিনিকল ৪০ দিনের আখ মাড়াই কার্যক্রমের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। চিনিকলের প্রধান উপকরণ আখের সঙ্কট থাকায় গত বছরের তুলনায় এ বছর কম সময় মাড়াই হবে। আখ দীর্ঘ মেয়াদি ফসল ও দাম অন্য ফসলের তুলনায় কম হওয়ায় কৃষকরা আখ চাষে আগ্রাহ হারাচ্ছেন। চিনিকলটি বাঁচিয়ে রাখতে আখ চাষ আধুনিকায়ন ও ফলন বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। বছর শেষে ডিস্টিলারি বিভাগের টাকায় লাভ-লোকসানের হিসাব কষেই লাভের অংশে রক্ষা পায় কেরুর অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের জীবন। নয়তো অন্য মিলের মতোই ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হতো।

১৯৩৮ সালে চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় কেরু চিনিকল লিমিটেড কোম্পানিতে গড়ে ওঠে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন চিনিকলটি পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সমস্যা আর সম্ভাবনার মধ্য দিয়ে মিলের কার্যক্রম চলছে। ৮৪ বছরে এ চিনিকল তিন অর্থ বছরে লাভের মুখ দেখেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৮৪ বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ ডিস্টিলারি বিভাগ হতে পণ্য বিক্রি হয়েছে।

কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকল সূত্রে জানা যায়, ডিস্টিলারি বিভাগে ৯ প্রকারের বিলেতি মদ ওল্ড রাম, জারিনা ভদকা, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, রোসা রাম, চেরি ব্র্যান্ডি অরেঞ্জ করাকাও, ফাইন ব্যান্ডি, গোল্ড রিবন জিন ও মল্টেড হুইস্কি উৎপাদিত হয়। নতুন করে এখানে বিয়ার তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও নতুন দুটি বিক্রয় কেন্দ্র চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, চিনিকলটি আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে। ডিস্টিলারি বিভাগটি ঢেলে সাজানো হবে। গত ডিসেম্বর মাসে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়েছে। পণ্য বিক্রি কয়েকগুণ বেশি। চিনিকলসহ যে ইউনিটে লোকসান আছে তা কাটিয়ে উঠতে নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ চলছে। গত অর্থ বছরের চেয়ে এ অর্থ বছরে প্রায় ৬০-৭০ কোটি টাকা লাভ হবে ভ্যাট ও সকল খরচ বাদে। চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন এ প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে আশাবাদী।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //