৪১ বাংলাদেশিকে ফেরত দিলো মিয়ানমার

মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার এক নারীসহ ৪১ বাংলাদেশিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাভোগের পর ফেরত দিয়েছে দেশটি। আজ বুধবার (২৩ মার্চ) সকাল পৌনে ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত দেশটির মংডু শহরে দুই দেশের মধ্যকার পতাকা বৈঠক শেষে তাঁদের হস্তান্তর করে মিয়ানমার। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) অধিনায়ক পর্যায়ে এ পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের ১৬ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার। আর মিয়ানমারের ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির ১ নম্বর বিজিপির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাও না ইয়াং শো। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি ছিলেন টেকনাফের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরফানুল হক চৌধুরী ও কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি টেকনাফ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) খুরশিদ আলম। লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার ৪১ বাংলাদেশিকে ফেরত দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার বলেন, আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে টেকনাফ ট্রানজিট জেটিঘাট দিয়ে স্পিডবোটে মিয়ানমারের উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা। পতাকা বৈঠক শেষে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাভোগ করা ৪১ বাংলাদেশিকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে টেকনাফ ট্রানজিট ঘাটে পৌঁছায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল। এ সময় ফেরত আনা নাগরিকদের স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।

টেকনাফে ঘাটে পৌঁছানোর পর শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি ও দেশটির বাংলাদেশ কনস্যুলেটের দীর্ঘ এক বছরের প্রচেষ্টায় মিয়ানমারের কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ৪১ বাংলাদেশিকে আজ দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। তাঁরা বিভিন্ন মেয়াদে সে দেশে সাজা ভোগ করেছেন। তিনি আরও বলেন, কয়েক দিন আগে নাফ নদী থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া ১৮ জেলের বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন বলে জানিয়েছেন।

টেকনাফের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, ফেরত আনা ৪১ জনকে অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে।

ফেরত আসা একমাত্র নারী বলেন, ট্রানজিট পাস নিয়ে মিয়ানমারের বেড়াতে গিয়ে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করে তাঁকে কারাগারে পাঠায়। দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর পর নিজের দেশে ফেরত এসেছেন।

সিরাজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘নাফ নদীর জলসীমা থেকে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা অবৈধভাবে ঢুকে মাছ ধরার সময় ধরে নিয়ে আমাকে কারাগারে পাঠান। চার বছর পর আজ ফেরত এসেছি।’

ফেরত আসা ৪১ বাংলাদেশি হলেন মৌলভীবাজারের নয়াগ্রামের জাকির হোসাইন, কক্সবাজারের উখিয়ার নুরুল আবছার, আলী আহমদ, টেকনাফের মোহাম্মদ আইয়ুব খান, সিরাজুল ইসলাম, সাদ্দাম হোসাইন, আবদুল রশীদ, মোহাম্মদ সাকিব, এক নারী, মোহাম্মদ শরীফ, ইমরান হোসাইন, নুর কাশেম, সুলতান, মোহাম্মদ সলিম, মো. সাদেক, মকবুল মাঝি, নুর আলম, মো. আলম, করিম উল্লাহ, মোর্শেদ আলম, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, মো. রফিক, জানে আলম, মোহাম্মদ বাবুল ও মুজিব উল্লাহ। 

বান্দরবানের উজানীপাড়ার মং থিং মারমা, ভাংগামুড়ার নথিমং মারমা, মংলংচিং মারমা, কুহলংপাড়ার ইউ মং চিং মারমা, কামাইজা ঝিরিপাড়ার হারমনি ত্রিপুরা, হ্লেহে ত্রিপুরা ও রেশংপাড়ার ড্যানিয়েল ত্রিপুরা।

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ির চাইলাপ্রু মারমা। রাঙামাটির কচুখালীর উছা থুই মারমা, নিজপাড়ার চাইন ডু অং মারমা, তম্বু পাড়ার থোয়াই লা চাই মারমা, হ্লা সুইচং মারমা, হেডম্যান পাড়ার সাচিং ইউ মারমা, পশ্চিম সোনাছড়ির থোয়াই কি চিং মারমা, সাধু অং মারমা ও শামুকছড়ি পাড়ার পাই সা থুই মারমা।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //