জামালপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২২, ০৬:০৭ পিএম
আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২২, ১০:০৯ এএম
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় ঝিনাই নদী থেকে ট্যাফে ট্রাক্টর দিয়ে প্রতিদিন অবৈধভাবে বালিয়া সেতুর নিচ থেকে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র। সেতুর কয়েক গজ দুর থেকে বালি উত্তোলন করায় ওই এলাকায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চরবালিয়া সেতুসহ চার গ্রামের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া রাস্তা, বেড়িবাঁধসহ সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় পৌরসভার সাতপোয়া গ্রামের আবু সাঈদ, বিপ্লব, রবিন তাদের লোকজন নিয়ে বালিয়া সেতু সংলগ্ন ঝিনাই নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার হয়নি বলেও জানান স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের চরবালিয়া গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ঝিনাই নদী। শুকনো মওসুমে এ নদীর কিছু অংশ শুকিয়ে যায়। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি চক্র নদীর ওই শুকনো অংশগুলো থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করে। তা ট্যাফে ট্রাক্টরযোগে বিভিন্নস্থানে বিক্রি করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হচ্ছে।
প্রতি গাড়ি বালু হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এ লোভে পড়ে বেশ কয়েকটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আসছে। বালু উত্তোলনে ঝিনাই নদীর উপর নির্মিত দুই পাড়ে মানুষের যোগাযোগের একমাত্র বালিয়া সেতুটি হুমকির মুখে পড়েছে। এতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধও হুমকিতে রয়েছে। ট্যাফে ট্রাক্টর দিয়ে বালু আনা-নেয়ার ফলে ক্ষতি হচ্ছে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা অনেক রাস্তার।
এলাকাবাসী জানান, সেতু দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পারাপার হচ্ছে। সেতুটি ভেঙে পড়লে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ অসুস্থ, নারী ও শিশুদের পড়তে হবে চরম বিপাকে। এলাকাবাসীর দাবি, নদী থেকে দ্রুত বালু উত্তোলন বন্ধ করে ভেঙে যাওয়ার আগেই সেতুটি রক্ষা করা হোক।
স্থানীয় রফিকুল ইসলাম, সাইদুর রহমান, আলমাস উদ্দিনসহ অনেকেই বলেন, বালু কাটার ফলে নদীর আশপাশের রাস্তা ও ১০ গ্রামের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র চলাচলের সেতুটি হুমকির মুখে পড়েছে। নদীর গভীর থেকে বালু উত্তোলন করায় সেতুর একটি পিলারের চারপাশ থেকে মাটি সরে গেছে। সেতুটি এমনিতেই হুমকির মুখে রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনের বর্ষা মৌসুমে সেতুটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ইউপি সদস্য আব্দুল মালেক জানান, ১০ গ্রামের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র সেতু এটি। সেতুর পাশ থেকে বালু চক্রের একটি দল প্রতিদিন বালি উত্তোলন করে তা বিক্রি করছে। এতে বেড়িবাঁধের আশপাশে থাকা বসতবাড়ি, রাস্তা-ঘাটসহ সেতুটি হুমকির মুখে পড়েছে। উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না।
ডোয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক স্বপন বলেন, অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারণে চরবালিয়া সেতু, বেড়িবাঁধ, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
অভিযুক্ত বালু উত্তোলনকারী আবু সাইদ ও বিপ্লব মিয়া জানান, নদীতে যাদের জমি রয়েছে তাদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে আমরা বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন জায়গাতে বিক্রি করে থাকি। জমির মালিকরা বালু বিক্রি না করলে তো আমরা নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে পারতাম না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপমা ফারিসা বলেন, সেতুর নিচ থেকে মাটি উত্তোলনের বিষয়টি জেনে এসিল্যান্ডকে দিয়ে অভিযান পরিচালনা করে একবার দুটি ট্যাফে ট্রাক্টর জব্ধ ও বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছিল। পুনরায় বালু উত্তোলন হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh