আমিষ খাননি এক দশক, পেলেন ‘বঙ্গবন্ধু সম্মাননা স্মারক’

বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের ফাঁসির আদেশ কার্যকর না হওয়া আমিষ খাবেন না এমন ‘ওয়াদা’ করেছিলেন তিনি। এরপর কেটেছে ১০ বছর। কথা রাখার প্রতিদানস্বরূপ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে তাকে দেয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু সম্মাননা স্মারক।

আমিষ ছেড়ে দেয়া সেই ব্যক্তির নাম শেখ আব্দুল আলিম। তিনি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক তিনি।

গত ২৬ মার্চ রাত সাড়ে ১০টার দিকে  লালমনিরহাট  মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে এই সিনিয়র সাংবাদিককে সম্মাননা স্বারক ও উপহার সামগ্রী তুলে দেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান। এসময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর।

প্রবীণ সাংবাদিক শেখ আব্দুল আলিম বলেন, স্বপ্ন ছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার কার্যকর হওয়া। সেটি আমার জীবন দশায় দেখে যেতে পেরেছি। এর চেয়ে বড় কিছু পাওয়ার নেই। তবে শেষ আরেকটি ইচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করা। এটি হলে আমি মরে গিয়েও শান্তি পাব। তবে সেই স্বপ্ন কি আদৌ পূরণ হবে কি না বলতে পারছি না।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ৫০ বছর আজ পূরণ হয়েছে। সেই দিনে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আমাকে  উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু সম্মাননা স্মারক ‘ প্রদান করেছে সত্যি আমি ভাগ্যবান। যারা এই আয়োজন করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা চেয়ে তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণের পর তার বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। তাই তিনিসহ বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। দীর্ঘদিন হওয়ার পরেও দেখি এই হত্যার বিচার কার্যকর হচ্ছিল না। তাই পাগলের মত প্রতিবাদ করছি।

জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার বিচার না হলে তিনি আত্মহত্যা করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আক্ষেপ নিয়ে চিঠি লিখেন শেখ আব্দুল আলিম। এমন ঘোষণায় তাঁকে নেয়া হয় সেফকাস্টুডিতে। পরে কালীগঞ্জ থানা থেকে ছাড়িয়ে নেন আ’লীগ নেতা, তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান,বর্তমান সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। তারপরও তিনি থেমে থাকেননি। ওই সময় পরে আলিম পণ করেন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার বিচারের রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তিনি আমিষ (মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি) খাবেন না। যেসব খাবার তৈরিতে ডিম ব্যবহৃত হয় সেগুলোও খাওয়া ছেড়ে দেন। যার ফলে আমিষ খাওয়া ছাড়ায় তিনি নানা শারীরিক সমস্যায় পড়েন, কিন্তু ‘ওয়াদা’ থেকে পিছপা হননি। এমনকি বাড়িতে তিনি কোরবানিও দেননি। প্রায় এক দশক পর ২০১০ সালের জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকর হওয়ার পর এলাকার লোকজন আনুষ্ঠানিকভাবে আবদুল আলিমকে আমিষে ফিরিয়ে আনে।

আপাদমস্তক বঙ্গবন্ধুর ভক্ত শেখ আবদুল আলিমের (৬৩) বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুরে। জন্মস্থান ভারতের আসাম থেকে ১৯৬৫ সালে মা-বাবার সঙ্গে যান ময়মনসিংহের নান্দাইলে। ১৯৭০ সালে তাঁরা আসেন কালীগঞ্জে। চার সন্তানের জনক আলিম মুক্তিযুদ্ধের সময় জড়ান সাংবাদিকতায়। রংপুরের প্রবীণ সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা বাটুলের সম্পাদনায় ভারতের দিনহাটা থেকে প্রকাশিত রণাঙ্গন পত্রিকা দেশে এনে গোপনে বিতরণ করতেন। কালীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। এখন বৃদ্ধ বয়সে তাঁর শরীরে নানা রোগ ভর করেছে। এর পরও বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে চলেন একটি জাতীয় দৈনিকের কালীগঞ্জ প্রতিনিধি আলিম। এছাড়াও  স্কুলে স্কুলে গিয়ে শিশুদের শোনান বঙ্গবন্ধুর কীর্তির কথা।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু সম্মাননা স্মারক অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসার কারণে ১১ বছর শেখ আব্দুল আলিম নিরামিষ খেয়েছিল। এটি যেনতেন কোন ব্যাপার নয়। তার ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা। নতুন প্রজন্মকে এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তৌহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা,  সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায়, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আশরাফ হোসেন বাদল, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মেজবাহ্ উদ্দিন আহমেদ, বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন অব: আজিজুল হক, বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক ফেরদৌসি বেগম বিউটিসহ প্রমুখ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //