অনলাইন জুয়াড়ি সিন্ডিকেটে সর্বস্বান্ত রাজশাহীর যুবকরা

আইপিএল ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন রাজশাহী মহানগরের সব শীর্ষ জুয়াড়িরা। শুধু ক্রিকেট নয়, ক্যাসিনো, ফুটবলসহ বিভিন্ন বেট সাইডে অনলাইনে জুয়া খেলার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। একই সাথে জুয়া খেলায় অংশগ্রহণকারীরা নিজের সকল অর্থ হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছেন।

দেশে সাইবার ক্রাইম অপরাধের মধ্যে অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে অনলাইনে জুয়া খেলে ও অর্থ পাচার। মাঝে মধ্যে দুই একজন জুয়াড়ি গ্রেপ্তার হলেও শীর্ষ জুয়াড়িরা আড়ালেই রয়েছেন। ক্রিকেট জুয়াড়িদের কাছে জনপ্রিয় বেশকিছু সাইট বন্ধ করে দেওয়া হলেও রাজশাহীতে বেট-৩৬৫ এ চলছে জমজমাট জুয়া খেলা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি নিজেদের একাউন্টের মাধ্যমে ডলার দিয়ে এসব জুয়া খেলার প্রবণতা বেড়েছে। এই চক্রের সাথে কয়েকজন ব্যাংকার ও এজেন্ট জড়িত রয়েছেন। তাদের মাধ্যমেই জুয়ায় অংশগ্রহণকারীরা অর্থ লেনদেন করেন। গুগলে ‘টপ টেন বেটিং সাইট ইন বাংলাদেশ’ লিখে সার্চ দিলে ‘জালাগাম ডটনেট/এজেড’ ঠিকানায় প্রায় সবগুলো সাইটই পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে আটটি সাইটে জুয়ার আসর বসছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বেট-৩৬৫। এ সাইটে আইপিএল খেলার বিভিন্ন ম্যাচের নানা দিক নিয়েও জুয়া খেলা হয়।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে, রাজশাহী সিটি ও জেলার কিছু শীর্ষ জুয়াড়িদের নাম উঠে এসেছে। এসব জুয়াড়িরা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত অনলাইনে জুয়া খেলার জন্য গড়ে তুলেছে বিশাল সিন্ডিকেট। সাম্প্রতিক সময়ে আইপিএল ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে তারা সক্রিয় হয়ে উঠছেন। 

জুয়া খেলার জন্য সম্প্রতি রাজশাহীর ফাইসাল নামে এক ব্যাংকার ব্যাংকের ভোল্ট থেকে তিন কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। 

রাজশাহীর নগরীর শীর্ষ অনলাইন জুয়াড়িদের মধ্যে প্রশাসনের তালিকায় রয়েছেন- নগরীর শাহমুখদুম এলাকার পিন্টু, আলুপোট্রি এলাকার অসোক, মোল্লাপাড়ার সরিফুল ইসলাম জ্যক, লক্ষীপুর এলাকার পায়েল, নগরীর বসুয়া উত্তরপাড়ার হাফেজ মোল্লার ছেলে রুবেল হোসেন (৩৩), রাজপাড়া থানার শ্রীরামপুরের বাসিন্দা টুটুল শেখের ছেলে বিশাল (১৭), চন্ডিপুর এলাকার রাজুর ছেলে বুলবুল (৩০), একই এলাকার আলী পান্নার ছেলে তুষার আহম্মেদ (৩১) ভাটাপাড়া এলাকার মাইনুল ইসলামের ছেলে মিলন (৩০), কয়েরদাড়া বিলপাড়া এলাকার নাজিম শেখের ছেলে স্বজল (২৫), ধরমপুর এলাকার মো. আলতাব হোসেনের ছেলে মো. আনোয়ার পারভেজ (২৬) ও কাশিয়াডাঙ্গা নিবাসী জাহানের ছেলে ফরিদুল ইসলাম হামিম (২০)।

জানা গেছে, অভিযুক্তদের কয়েকদিন আগে আরএমপি পুলিশ গ্রেপ্তারও করেছিল। পরে পরিবারের জিম্মায় তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে তারা আইপিএল ক্রিকেট নিয়ে জুয়া খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। 

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বিদিরপুর এলাকার মাইনুল কশাইয়ের ছেলে হামিম, দেউপাড়া বিয়ানাবুনা গ্রামের শরিফ উপজেলা পর্যায়ে শীর্ষ জুয়াড়িদের মধ্যে রয়েছেন।

জুয়াড়িদের দেয়া তথ্যমতে, বাজিকরদের বেশির ভাগই শিক্ষিত শ্রেণির। অনলাইনে ডলার ব্যবহার করে বাজি ধরা হচ্ছে। এর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড। সাইটগুলোতে প্রথমে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হয়। পরে জুয়ায় অংশ নিতে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করতে হয়। 

আরো জানা গেছে, যাদের ক্রেডিট কার্ড নেই অথবা যেসব সাইটে বাংলাদেশ থেকে নিবন্ধন করা যায় না সেখানেও আছে বিকল্প ব্যবস্থা। বাংলাদেশে ওসব জুয়ার সাইট নিয়ন্ত্রণে ‘এজেন্ট’ রয়েছে। তারাই অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া এবং অর্থ পরিশোধের কাজটি করে দেয়। টাকার বিনিময়ে তারা ডলার কিনে নেন জুয়াড়িদের কাছ থেকে।

অনলাইন বেটিংয়ে জড়িত ছিলেন এমন একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রাজশাহীতে বেট ৩৬৫ নামক আন্তর্জাতিক সাইটটিতে সবচেয়ে বেশি বেটিং করা হয়। সাইটটিতে বেটিংয়ে অর্থের ক্ষেত্রে দুটি মুদ্রা ব্যবহৃত হয় ইউএসডি (মার্কিন ডলার) ও ইউরো। অ্যাকাউন্ট ভেরিফায়েড হওয়ার পর এবং নিজের অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা করার পর বাজি ধরা যায়। সেখানে খেলার লাইভ স্ট্রিমিং চলাকালে বাজি ধরা যায়।

তিনি আরো জানান, ক্রিকেটের ক্ষেত্রে ম্যাচ, বল, ওভার, খেলোয়াড় ভিত্তিক বিট করা যায়। কোন দল জিতবে, কে কত রান করবে, কোন ওভারে কত রান হবে বাজিগুলো সাধারণত এমন হয়ে থাকে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্যাসিনো বা পোকারের লাইভ স্ট্রিমিংয়ের সময়েও বাজি ধরা যায়।

এ বিষয় নগরীর শীর্ষ জুয়াড়ি আলুপট্টি এলাকার অসোক বলেন, আগে খেলতাম বেট-৩৬৫ তে। বেট-৩৬৫ দিয়ে তিনি বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে ডলার তুলে নেন অ্যাকাউন্টে। এরপর ক্রিকেট, ক্লাবের ফুটবলে বাজি ধরেন ডলারে। জিতলে সেই ডলার আবার এজেন্টের মাধ্যমেই বিক্রি করে দেই।

এ বিষয়ে আরএমপি সাইবার ক্রাইম ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএসপি উৎপল চৌধুরী বলেন, নগরীতে যারা অনলাইনে জুয়া খেলার সাথে জড়িতদের তাদের তালিকা করা হচ্ছে। আইপিএল ক্রিকেট খেলার সময় এসব জুয়াড়িরা সক্রিয় হয়ে উঠেন। দ্রুত এসব জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান চলবে বলে জানান তিনি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //