পুলিশ হেফাজতে যুবকের মৃত্যু, এসআই প্রত্যাহার

লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নে পুলিশের নির্যাতনে রবিউল ইসলাম (২৬) নামের এক পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত এসআই আব্দুল হালিমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওই পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। রবিউল ওই ইউনিয়নের কাজির চওড়া এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী দুলাল খানের ছেলে। 

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, ইউনিয়নের ওই কুমারের মাল্লি এলাকায় বৈশাখী মেলা বসে। মেলা শেষে রাতে সেখানে স্থানীয় কয়েকজন জুয়ার আসর বসায়। খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ রাত ৯টার দিকে অভিযান চালায়। এসময় রবিউল ইসলাম রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। অভিযানকালে রবিউল ইসলামসহ দুইজনকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু রবিউল জুয়া খেলেননি এমন দাবি করে পুলিশ ভ্যানে উঠতে আপত্তি জানালে পুলিশ তাকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মারে ও পায়ের বুট দিয়ে লাথি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে এসআই আব্দুল হালিম অণ্ডকোষে লাথি মারে। এসময় ব্যথায় কাতরাচ্ছিল রবিউল। কিন্তু দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা কোনো পাত্তা না দিয়ে বলেন, রবিউল অভিনয় করছে। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ রবিউলকে অচেতন অবস্থায় সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।

তবে পুলিশের ভাষ্য, রবিউল পথিমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়লে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দায়িত্বরত চিকিৎসক রবিউলকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। রংপুর পাঠানোর প্রস্তুতিকালে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তিনি মারা যান। 


এদিকে ওই ঘটনার প্রতিবাদে রাতেই গাছের গুড়ি ফেলে লালমনিরহাট-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিচার দাবি করে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। আজ শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে আবারো বিক্ষুব্ধ জনতা স্থানীয় মহেন্দ্রনগর বাজারে লালমনিরহাট-ঢাকা মহাসড়কে গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ করে। এসময় শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। 

এসময় বিক্ষুব্ধ জনতা অভিযুক্ত সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হালিমের শাস্তি দাবি করেন। দীর্ঘ ৫ঘন্টা সড়ক অবরোধ থাকার পর বিকাল ৩টার দিকে পুলিশ প্রশাসনের বিচারের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

রবিউলের পরিবারের দাবি, এক সপ্তাহ আগে রবিউল বাড়িতে এসেছে। মেলায় বেড়াতে যায় সে। রবিউল জুয়া খেলেননি, তাই পুলিশ ভ্যানে উঠতে রাজি হচ্ছিলেন না। এ জন্য পুলিশ তাকে মারধর করে ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। পুলিশের লাথিতে অণ্ডকোষে আঘাতপ্রাপ্ত হন তিনি। কিন্তু দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা এতে কোনো পাত্তা না দিয়ে বলে, রবিউল অভিনয় করছে। 

এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর থানার ওসি শাহা আলম বলেন, আমি ঘটনাস্থলে আছি। রবিউল কীভাবে মারা গেছে চিকিৎসকরা বলতে পারবেন। তাই তাদের কাছে খোঁজ-খবর নিন। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না।

লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, জুয়া খেলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুইজনকে আটক করে। থানায় আসার পথে রবিউল অসুস্থ অনুভব করলে তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে রংপুর মেডিকেলে নেয়ার প্রস্তুতিকালে তার মৃত্যু হয়।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি স্ত্রী হত্যার অভিযোগে হিমাংশু বর্মণ (৩৬) নামে একজনকে আটক করে হাতীবান্ধা থানা পুলিশ। পরে পুলিশের হেফাজতে তিনি মারা যান। এ ঘটনার প্রতিবেদন জমা দিতে তদন্ত কমিটিকে এক সপ্তাহের সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনো প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //