বরিশাল নদী বন্দরে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড়

ঈদ শেষ হয়েছে ছয়দিন আগে এখনো বরিশাল নদী বন্দর ও সড়ক পথে মানুষের ভিড়। সময় যত যাচ্ছে ভিড় যেন ততই দীর্ঘ হচ্ছে। 

আজ রবিবার (৮ মে) সকাল থেকে বরিশাল আধুনিক নৌ-বন্দর, শহরের কেন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড এবং রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

এদিকে ঈদের ষষ্ঠ দিনে বরিশাল থেকে সড়ক পথে যাত্রীদের চাপ পূর্বের থেকে বেড়েছে। ইতিপূর্বে সরাসরি ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ শুধুমাত্র নদী বন্দরেই বেশি দেখা যায়। এখন নদী বন্দরের সাথে যাত্রীতে ঢাসা হয়ে ছাড়ছে দূরপাল্লার পরিবহন।

সরেজমিনে বরিশাল নদী বন্দরে দেখা গেছে, ‘গত দুদিনের ন্যায় রবিবারও নদী বন্দরে যাত্রীদের প্রচুর ভিড় রয়েছে। রবিবার সকাল ১০টার পর থেকেই ঢাকামুখী যাত্রীরা বরিশাল নদী বন্দরে ভিড় করছে। দুপুর থেকেই নদী বন্দর এলাকায় যাত্রীতে ঠাসা হয়ে যায়। লঞ্চের ভেতরে ডেকে এমনকি কেবিনের সামনেও জায়গা না পেয়ে যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে জায়গা করে নিয়েছেন লঞ্চের ছাদে।

কথা হয় বরিশাল থেকে ঢাকা পৌঁছাতে কীর্তনখোলা ১০ লঞ্চের তৃতীয় তলায় কেবিনের সামনে অবস্থান নেয়া ভোলার পশ্চিম চর উমেদপুরের বাসিন্দা মো. আলাউদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, ‘ঢাকার একটি সেমাইয়ের কারখানায় চাকরি করেন তিনি। পরিবারের সাথে ঈদ করতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়িতে এসেছিলাম। আজ (রবিবার) ঢাকায় যাচ্ছি। লঞ্চের কোথাও জায়গা না পেয়ে কেবিনের সামনে কোনরকম জায়গা করে নিয়েছি।

তিনি বলেন, ‘গত দুদিন আগে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছিলাম। কিন্তু ভিড়ের কারণে যেতে পারিনি। আজ না গেলে আর চাকরি থাকবে না। তাই বাধ্য হয়েই ভিড় ঠেলে ঢাকায় যাচ্ছি। আল্লাহ এখন ভালোভাবে পৌঁছলেই শুকরিয়া।

অপরদিকে লঞ্চে জায়গা না পাওয়া নিয়ে অভিযোগ করেছেন একাধিক যাত্রীর। তারা বলেন, ‘লঞ্চের স্টাফ এবং দালালরা ডেকে চাদর ও তোষক বিছিয়ে জায়গা দখল করে রেখেছে। সেখানে জায়গা পেতে দিতে হচ্ছে পাঁচশ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত। এসব লঞ্চ, বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের সামনেই ঘটছে। অথচ তারা কিছু বলছেন না।

রাজধানীর বাড্ডায় একটি স-মিলে কর্মরত ইউসুফ বলেন, ‘কুয়াকাটা-২ লঞ্চের দ্বিতীয় তলার ডেকে জায়গা পেতে অনেক দামাদামি করে ৭০০ টাকায় দুই হাত জায়গা পেয়েছি। সেখানেই আমরা পরিবারের চারজন ঢাকায় যাচ্ছি। ঈদের সময় যেখানে লঞ্চে জায়গা নিয়ে কাড়াকাড়ি সেখানে ডেকে চাদর আর তোষক বিছিয়ে এমন স্বেচ্ছাচারিতা মানা যায়না বলে মন্তব্য করেন এই যাত্রী।

এদিকে বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন বলেন, ‘গত দুইদিনের ন্যায় রবিবারও বরিশাল নদী বন্দরে যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি ছিলো। এ কারণে পূর্বের ন্যায় মোট ১৪টি বেসরকারি নৌ-যান ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। যার মধ্যে সরাসরি ১০টি বিলাশবহুল লঞ্চ ঢাকায় ছেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া ভায়া রুটের এমভি রেডসান-৫ নামের একটি লঞ্চ বরিশাল হয়ে গেছে। পাশাপাশি দিবা সার্ভিসের দুটি নৌ-যান যাত্রী নিয়ে বরিশাল ত্যাগ করেছে। এর বাইরে বিআইডব্লিউটিসির দুটি জাহাজ বরিশাল থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেছে। বেসরকারি যে ১০টি বিলাশবহুল লঞ্চ রবিবার বরিশাল থেকে যাত্রী পরিবহন করেছে সেগুলো হল- এমভি সুরভী-৯, পারাবত-১৮, এমভি মানামী, এমভি এ্যাডভেঞ্চার-১, সুরভী-৮, কুয়াকাটা-২, পারাবত-৯ ও কীর্তনখোলা-১০।

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘শনিবারও চাপ বেশি থাকায় সময়ের আগেই লঞ্চগুলো যাত্রীতে ভরে যায়। এ কারণে আগেভাগেই লঞ্চগুলো ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া অতিরিক্ত যাত্রী বহন করায় চারটি লঞ্চকে জরিমানাও করা হয়েছে। ভিড়ের কারণে অনেক যাত্রী শনিবার ঢাকায় যেতে পারেনি। তারা রবিবার ঢাকায় যেতে লঞ্চে উঠেছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে ভিড় কমবে বলে ধারণা এই কর্মকর্তার।


বরিশাল নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মুহা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘গত কদিন ধরেই লঞ্চে যাত্রীদের চাপ বেশি। এবার দক্ষিণাঞ্চলে কয়েক লাখ মানুষ এসেছে ঢাকা থেকে। তারাই আবার নৌ পথে ফিরছে। যে কারণে চাপটাও একটু বেশি। তবে দু-একদিনের মধ্যে চাপ কমবে বলে আশা করছি।

তিনি বলেন, ‘যতটা সম্ভব আমরা চেষ্টা করছি যাতে যাত্রীরা ভোগান্তি বা হয়রানির শিকার না হয়। তাছাড়া লঞ্চে চাদর বিষয়ে জায়গা দখল এবং বিক্রি করার বিষয়টি নিয়ে লঞ্চ মালিকদের সাথে কথা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তাছাড়া লঞ্চগুলো যাতে অতিরিক্ত যাত্রীবহন না করা হয় সে বিষয়টিও তদারকি করা হচ্ছে। ইতিপূর্বে মোট আটটি লঞ্চে দুই লাক্ষাধিক টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, পন্টুনের সংকট রয়েছে। এজন্য তাদের একটু ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। কয়েকজন যাত্রী হুরোহুরি করে লঞ্চে উঠতে গিয়ে নদীতেও পরেছে। তাদেরকে নৌ বন্দরে দায়িত্বে থাকা ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করেছে। তবে পন্টুন নিয়ে সমস্যা সমাধানে আপাতত কিছু করার নেই। একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়ে আছে। টেন্ডারও হয়েছে। ঈদের পরবর্তী বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন মহলে যোগাযোগ করা হবে। তবে এবারের ঈদ পরবর্তী যাত্রা অনেকটাই যাত্রীদের জন্য ভোগান্তিমুক্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //