জাবিতে দশ বছরে ভর্তি ফরমের দাম বেড়েছে তিনগুণ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু হয়েছে। আজ বুধবার (১৮ মে) সকাল ১০টা থেকে অনলাইনে এ আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। আবেদন চলবে ১৬ জুন পর্যন্ত। এবছর ৩১ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে গত ১০ বছরে আবেদন ফি প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এবছর পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে ডি ইউনিট ছাড়া   বাকিসব ইউনিটের আবেদন ফি ৯০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে যা গতবছর ৬০০ টাকা ছিলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসসূত্রে জানা যায়, ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি আবেদন ফি ছিলো ৩০০ টাকা  যা ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে বেড়ে হয় ৩৫০।  একইভাবে ফি বেড়ে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে হয় ৫০০ টাকা,  ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ৫৫০ টাকা, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে হয় ৬০০ টাকা এবং এবছর বেড়ে তা হয় ৯০০ টাকা। যা দশ বছরে প্রায় তিনগুণ। 

কিভাবে ব্যয় হয় ভর্তি ফরম বিক্রির টাকা?

বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখার তথ্যানুযায়ী, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ফরম বিক্রি বাবদ ১২ কোটি ২৯ লাখ টাকা আয় হয়। ভর্তির যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে এ খাতে অবশিষ্ট থাকে ৯ কোটি টাকা। অবশিষ্ট এ টাকা ভর্তি পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকরা পারিশ্রমিক বা সম্মানী হিসেবে নেন।

জানা যায়, ভর্তি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন ও কেন্দ্রীয় ভর্তি পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে উপাচার্য  তিন লাখ, দুই উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, সব অনুষদের ডিন ও ইন্সটিটিউটের প্রধানগণ প্রত্যেকে পেয়েছে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এছাড়া  ভর্তি পরীক্ষায় পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকেরা প্রত্যেকে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা করে পেয়েছেন। কেন্দ্রীয় ভর্তি পরিচালনা কমিটির সাথে যুক্ত কর্মকর্তা প্রত্যেকে পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা করে।

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে এ খাত থেকে আয় হয় প্রায় ২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরীক্ষা আয়োজনে খচর হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সম্মানী ভাতা বাবদ খরচ দেখানো হয় আট কোটি এক লাখ ২২ হাজার টাকা। এছাড়া পরীক্ষা পরিচালনায় অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয় দুই কোটি ২০ লাখ টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) নির্দেশনা অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা থেকে আয়ের ৪০ শতাংশ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার বিধান থাকলেও তা মানা হয়নি বলে চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ইউজিসি যা এখনো চলমান।

আবেদন ফি বৃদ্ধির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম বলেন, এবছর আমরা ইউনিট সংখ্যা কমিয়ে এনেছি তাই ফরমের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। এবার কলা অনুষদের তিনটি ইউনিটকে একসাথে করা হয়েছে, যেখানে এই তিন ইউনিটে আগে খরচ হত ১৪০০ টাকা। কিন্তু ইউনিট একটি করাতে সেখানে খরচ হবে ৯০০ টাকা। ডি ইউনিট ছাড়া বাকি চারটি ইউনিটেই আগের তুলনায় টাকা কমানো হয়েছে।

এদিকে আজ বেলা বারোটার দিকে ভর্তি ফরমের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে জাবি শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। 

মানববন্ধনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার সভাপতি আবু সাঈদ বলেন, ইউনিট সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমানোর জন্য। কিন্তু ইউনিট সংখ্যা কমার সাথে সাথে শিক্ষকদের পরিশ্রমও কমেছে৷ এখন তাদের প্রশ্ন কম করতে হবে, অতিরিক্ত চাপ কম৷ কিন্তু ৬০০ টাকার ফরম ৯০০ টাকা করায় নিম্ন ও মধ্য আয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীদের উপর চাপ বেড়েছে৷ করোনার সময় তাদের রুজিরোজগার কম হয়েছে, এখনো তারা ভোগান্তি পোহাচ্ছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ফরমের দাম বাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সুযোগ সংকুচিত করছে। আমরা প্রসাশনকে ছাত্রবান্ধব সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //