শতবর্ষী লিচুবাগানে লিচুর বাম্পার ফলন

সাড়ে ছয় একরের বিশাল জায়গা। এখানে দাঁড়িয়ে আছে ১০০টি লিচু গাছ। এর কোনোটির বয়স প্রায় ১০০ বছর। আবার কোনোটির বয়স ৮০ কিংবা ৯০ বছর। আবার নতুন গাছও রয়েছে। সব গাছেই থোকায় থোকায় ঝুলছে লিচু আর লিচু। 

শতবর্ষী এ বাগানের টসটসে লিচু মন কাড়বে যে কারো। নড়াইল শহর সংলগ্ন পঙ্কবিলা গ্রামে শতবর্ষী এ লিচুবাগানে ভালো ফলন হওয়ায় খুশি সবাই। বাগানটি ‘সোনাখাঁর লিচুবাগান’ হিসেবে পরিচিত। বসতবাড়ির গা ঘেষেই বাগানটি গড়ে উঠেছে। এখানকার লিচু ফরমালিন বা বিষমুক্ত বলেও জানিয়েছেন বাগান মালিকসহ পরিচর্যাকারীরা। খরচ বাদে ছয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন বাগান সংশ্লিষ্টরা।

সোনাখাঁর হাত ধরেই নড়াইলের ‘পঙ্কবিলা’ এখন লিচু গ্রামে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিটিতে বাড়িতেই একাধিক লিচু গাছ রয়েছে। সোনাখাঁ তার জীবনদ্দশায় বসতবাড়ির পাশে লিচু বাগান শুরু করেন। তার সাফল্যের পথ ধরে পঙ্কবিলা গ্রামটি আস্তে আস্তে লিচু গ্রামে পরিণত হয়।


বাগান মালিকসহ পরিচর্যাকারীরা জানান, সোনাখাঁর লিচু বাগানে দেশি জাতের পাশাপাশি চায়না-থ্রি, মোজাফফর ও বেদানা জাতের লিচু রয়েছে। এ বছর ফলনও ভালো হয়েছে। বর্তমানে স্থানীয় জাতের দেশি লিচু বিক্রি শুরু হয়েছে। দুর-দুরান্ত থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ভিড় করছেন এই বাগানে। এরপর চায়না-থ্রি, মোজাফফর ও বেদানা জাতের লিচু বিক্রি শুরু হবে। আরো এক মাস এখানে লিচু পাওয়া যাবে। 

এখানকার লিচু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও যাচ্ছে কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, খুলনাসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে। বাগানটি ঘিরে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে।

পাইকারি লিচু ব্যবসায়ী কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা সদরের রমজান আলী জানান, সোনাখাঁর লিচু বাগানের বেশ সুনাম রয়েছে। এ বাগানের স্থানীয় জাতের লিচু আগেভাগেই পেঁকে যায়। তাই ক্রেতা চাহিদা রয়েছে। এই লিচু কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও ব্রাক্ষণবাড়িয়াসহ আশেপাশের এলাকায় পাইকারি দরে বিক্রি করি।  


বাগান পরিচর্যাকারী হাসমত বিশ্বাসসহ অন্যরা বলেন, এটা সোনাখাঁর ঐহিত্যবাহী বাগান। এখানে ২০ থেকে ২৫ জন কর্মী কাজ করেন। লিচুর মৌসুম ঘিরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। খুলনা, ঢাকাসহ দুর-দুরান্তে আমাদের লিচু চলে যায়।

পঙ্কবিলা গ্রামের তৌহিদুর রহমান বলেন, সবচেয়ে মজার বিষয় হলো সোনাখাঁর শতবর্ষী লিচু বাগান দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসেন। ছবি তোলেন, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেন। উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় এখানে। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিমি ও নুসরাত বলে, এখানে প্রায়ই আসি। লিচু দেখে ও খেয়ে মজা পাই।

বাগান পরিচর্যাকারী হাফিজুর রহমান বলেন, এ বছর ৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি ১২ লাখ টাকার বেশি লিচু বিক্রি করতে পারব।


সানাউল্লাহ খান ওরফে সোনাখাঁর ছেলে কামরুজ্জামান খান তুহিন বলেন, বাবা বাগানটা করেছিলেন অনেক স্বপ্ন নিয়ে। ওনার উদ্দেশ্য ছিল এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বিষমুক্ত লিচু উৎপাদন হবে। একটা কথা সবাইকে দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই, আমাদের বাগানের লিচু সম্পূর্ণ ফরমালিনমুক্ত। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইলের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় জানান, সোনাখাঁর লিচু বাগানের যেমন ঐহিত্য রয়েছে, তেমনি স্বাদেও অতুলনীয়। পঙ্কবিলা ছাড়াও নড়াইলের বিভিন্ন অঞ্চলে লিচু চাষাবাদ হচ্ছে। এ বছর ৫৫ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //