সেই অধ্যক্ষকে নিয়ে এমপির সংবাদ সম্মেলন, অভিযোগ অস্বীকার

রাজশাহীর গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন এসে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী তাকে পেটানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এমপির সঙ্গে বসে ওই কলেজ অধ্যক্ষও বলেন, তাকে এমপি পেটাননি। যদিও নির্যাতনের অভিযোগ পেয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক তার কার্যালয়ে গত ৭ জুলাই রাতে রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে ‘পিটিয়ে’ আহত করেন বলে অভিযোগ উঠে। গত মঙ্গলবার (১২ জুলাই) সহকর্মীদের মাধ্যমে ঘটনাটি প্রকাশ পায়।

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ দাবি করেন, অধ্যক্ষ ফোরামের সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে নিজেরা নিজেরাই ধাক্কাধাক্কি করেছেন। সংসদ সদস্য তাদের নিবৃত্ত করেছেন। ওমর ফারুক মারধর করেছেন, তার এমন বরাত দিয়ে একটি দৈনিকে যে খবর ছাপা হয়েছে, তা তিনি বলেননি। সাংবাদিকেরা যখন অধ্যক্ষের কাছে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চান, তখন তিনি বলেন, নিজেদের ধাক্কাধাক্কির কারণে আহত হয়ে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন।

রাজশাহী নগরের নিউমার্কেটের পাশে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ওমর ফারুকের পক্ষ থেকেই এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গোদাগাড়ীর মাটিকাটা আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল আওয়াল, প্রেমতলী কলেজের উপাধ্যক্ষ আ নু গো মাহমুদুল হাসান, গোদাগাড়ী সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উমরুল হক, পাকড়ী কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল গাফফার, গোদাগাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রোকনুজ্জামান প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বলেন, সেদিন ঈদ উপলক্ষে তারা কয়েকজন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এ সময় তাদের অধ্যক্ষ ফোরামের কমিটি গঠন ও অভ্যন্তরীণ অন্যান্য বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে সংসদ সদস্য তাদের নিবৃত্ত করেন। এ ছাড়া অন্য কোনো ঘটনা ঘটেনি।

তিনি লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের একটি কুচক্রী মহল আগামীকাল ১৫ জুলাই তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে গোদাগাড়ী-তানোর নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর সুনাম নষ্ট করতে ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করেছে।

অধ্যক্ষ সেলিম রেজার এমন বক্তব্যের পর সাংবাদিকেরা তার কাছে জানতে চান, তার চোখের নিচে কালো দাগ কেন? তারা অধ্যক্ষের বাঁ হাতের কনুই দেখতে চান। সাংবাদিকদের কাছে তথ্য আছে, সংসদ সদস্যের মারধরে অধ্যক্ষের বাঁ হাতের কনুইয়ে ক্ষত হয়েছে। এ সময় অধ্যক্ষ তার হাত দুটি টেবিল থেকে নিচে নামিয়ে নেন। তিনি কিছুতেই কনুই দেখাতে রাজি হননি।

আহত না হলে কেন চিকিৎসা নিয়েছিলেন জানতে চাইলে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বলেন, অ্যাক্সিডেন্টলি লেগেছিল। তাই মৌখিকভাবে তিনি তাঁর ভাই সম্পর্কের একজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। লিখিত বক্তব্যে তর্কবিতর্কের কথা বললেও পরে তিনি স্বীকার করেন, তাঁদের নিজেদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল।

এই পর্যায়ে মাটিকাটা আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল আওয়াল সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি দাবি করেন, তিনিই অধ্যক্ষদের সেদিন ডেকেছিলেন। সেখানে তাদের ফোরামের কোষাধ্যক্ষ অধ্যক্ষ সেলিম রেজার সঙ্গে একটি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। তিনি নিজেও পড়ে গিয়েছিলেন, অধ্যক্ষ সেলিম রেজাও পড়ে গিয়েছিলেন।

তিনি  বলেন, এ সময় প্লাস্টিকের চেয়ার ও আলমারির সঙ্গে তাদের ধাক্কা লাগে। তাদের বিবাদ নিরসন করতে সংসদ সদস্য তাকে ধাক্কা দেন, অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকেও ধাক্কা দেন। তারপর বিষয়টা সেখানেই মীমাংসা হয়ে গেছে। তারা একসঙ্গে চা খেয়েছেন। সেলিম রেজাকে বুকে জড়িয়ে তিনি বাইরে বের হয়েছেন।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের কারণে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পারিবারিক জীবনে তিনি হেয়প্রতিপন্ন হয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের কাছে এর বিচার চান। তিনি তার সম্মান ফেরত চান।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //