ট্রেন দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া জুনায়েদ যেমন আছেন

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় ১১ জন নিহতের ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের একজন জুনায়েদ কায়সার ইমন চিকিৎসাধীন অবস্থায় অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন।

শনিবার (৩০ জুলাই) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন জুনায়েদ বলেন, গেট খোলা পেয়ে গাড়ি উঠে যায়। মুহূর্তেই মাঝামাঝিতে সজোরে ধাক্কা দেয় ট্রেনটি। সাথে সাথে গাড়ির পেছনের ডালা (ব্যাকডালা) খুলে যায়। আমরা নিচে পড়ে যাই।

 তিনি বলেন, ডালা খুলে যাওয়ায় পেছনের সবাই বেঁচে যায়।

গতকাল শুক্রবার (২৯ জুলাই) চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া স্টেশন এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় জুনায়েদদের মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১১ জন। আহত হন আরো ৭ জন। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৬ জন হাটহাজারীর আরএনজে কোচিং সেন্টারের ছাত্র ও শিক্ষার্থী। নিহত ব্যক্তিদের একজন চালক। তার সহকারীও আহত হন।

আহত সাতজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ছয়জন নিউরোসার্জারি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সার্জারি বিভাগে ভর্তি হওয়া জুনায়েদ সবচেয়ে কম আঘাত পান।

জুনায়েদ বলেন, আমরা আটটায় রওনা দিই। আমাদের সাথে চারজন শিক্ষক ছিলেন। ১০টার দিকে পৌঁছে যাই। সেখানে গোসল করি। অনেক আনন্দ হয়। এরপর বেলা একটার দিকে রওনা দিই খৈয়াছড়া ঝরনার থেকে। কিছুক্ষণের মধ্যে মাইক্রোবাসটি বড়তাকিয়া এলাকার রেলগেটে পৌঁছায়। এরপর ঘটে দুর্ঘটনা।

জুনায়েদ আরো বলেন, আমরা পাঁচজন পেছনে বসি। আমি ছাড়া এক বন্ধু মাহিম আর তিন এসএসসি পরীক্ষার্থী আয়াত, সৈকত ও তাসফির ছিল। ক্রসিংয়ে গেট খোলা ছিল। গেটম্যান দেখিনি। গাড়িটি লাইনে ওঠার সাথে সাথে ট্রেন এসে ধাক্কা দেয়। বিকট শব্দে আমরা হতবিহ্বল। নিচে পড়ে যাই। আমি উঠে দাঁড়ালাম। অন্যরা লাইনের পাশে পড়ে যায়। তখন বৃষ্টি পড়ছিল। আমি বৃষ্টির পানি খাওয়াই কয়েকজনকে।

ট্রেনটি মাইক্রোবাসটিকে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ঠেলে নিয়ে যায়। এর মধ্যে যাত্রীরাও নেমে আসেন ট্রেন থেকে। তখন জুনায়েদ হেঁটে হেঁটে মাইক্রোবাসের কাছে যান।

জুনায়েদ বলেন, হাঁটতে গিয়ে দেখি পায়ে ব্যথা লাগছে। রক্ত পড়ছে কয়েক জায়গা থেকে। মাইক্রোবাসের কাছে গিয়ে দেখি সবাই রক্তাক্ত। আমি আর পারিনি দেখতে।

উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র জুনায়েদ এখনো জানেন না তার কোন কোন বন্ধু কিংবা শিক্ষক মারা গেছেন। হাসপাতালে তার পাশে রয়েছেন বাবা আবুল কাশেম। বেঁচে যাওয়ার পর এক ট্রেনযাত্রীর কাছ থেকে ফোন নিয়ে আবুল কাশেমের সাথে কথা বলেছিলেন জুনায়েদ।

আবুল কাশেম বলেন, এক মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে জুনায়েদ ছোট। তার ওপর অনেক আশা। আল্লাহ তাকে এই যাত্রা বাঁচিয়ে দিয়েছেন। অনেক শুকরিয়া।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //