পদ্মায় আশঙ্কাজনকভাবে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে পাবনার ঈশ্বরদীর পাকশীতে দেশের সর্ববৃহৎ রেল সেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।
গত ৪০ বছরের মধ্যে এমন ভাঙন এখানে দেখা যায়নি বলেছেন স্থানীয়রা। ফলে হুমকিতে লালনশাহ সেতু, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও নদী রক্ষা বাধসহ আশেপাশের কয়েকশ একর ফসলি জমি। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ একর জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
গতকাল শুক্রবার (৫ আগস্ট) দুপুর ১২ টার দিকে পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মার পানি বাড়ার সাথে সাথে ব্রিজের নিচে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। মাত্র সাতদিনের ব্যবধানে ব্রিজের ৩নং পিলার (গার্ডার) থেকে ২নং পিলার পর্যন্ত নদীর চর ভেঙে গেছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে নদী রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়তে পারে। সেই সাথে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন সেতুরও ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। প্রায় ২৫ থেকে ৩০ একর জমির কলাবাগানসহ ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। নদী পারের বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন পার করছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে তারা।
ব্রিজের নিচের ফুসকা ও চটপটি বিক্রেতা জিয়াউর রহমান বলেন, চলতি বছরের শুরুতে ৪নং পিলারের কাছে চর ছিল এখন চর ভাঙতে ভাঙতে তা ২নং পিলারের কাছে চলে এসেছে। দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুরা ব্রিজের নিচে চরের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে আসেন। অস্থায়ী দোকানপাটে তারা কেনাকাটা ও খাওয়া-দাওয়া করেন। এভাবে নদীর তীর ভাঙতে থাকলে এখানে আর মানুষজন আসবে না। আমাদের ব্যবসাও থাকবে না।
রূপপুর গ্রামের আকবর আলী ও জালাল বলেন, দ্রুত গতিতে ভাঙছে পদ্মার চর। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে প্রায় তিন দশক ধরে আবাদ করছি। এমন তীব্র ভাঙন কখনো দেখিনি। এরই মধ্যে কলার বাগানসহ বেশকিছু জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের তীব্রতা দেখে মনে হচ্ছে ব্রিজের আশপাশের চর ভেঙে নদীতে বিলীন হয়েছে। এ চর ভাঙন রোধে কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
সাঁরাঘাট এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধা মরিয়ম বেগম বলেন, পদ্মায় পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে সাঁড়াঘাট এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। মাঝেমাঝে জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে তবুও ভাঙন রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কয়েকদিন যাবত পরিবারসহ নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উত্তরাঞ্চলীয় পরিমাপ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ হোসেন বলেন, গত ১১ দিনের ব্যবধানে পদ্মায় পানি বেড়েছে দুই মিটারের বেশি। ২৫ জুলাই পানির পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। আর শুক্রবার (৫ আগস্ট) দুপুর ১২টায় পানির পরিমাণ ১১ দশমিক ৯৬ সেন্টিমিটার। প্রতিদিনই পদ্মায় গড়ে ২৫ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি বাড়ছে। একই সাথে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে পদ্মার চরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।
পাকশী রেলওয়ে বিভাগের সেতু প্রকৌশলী নাজিব কাওছার বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে পিলারের আশপাশের স্থান নদীতে ভেঙে গেলেও ব্রিজের কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ ব্রিজের পিলার নদীর গভীরে পাইলিং করে স্থাপন করা হয়েছে।
নদী রক্ষা বাঁধের ক্ষতির সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে একাধিকবার আমার কথা হয়েছে। নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সরোয়ার জাহান সুজন বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের আশপাশের এলাকাসহ সাঁড়াঘাটে ভাঙন রোধে গত বছর প্রায় দুই কোটি টাকার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। এবার পানি বৃদ্ধির বিষয়টি জেনেছি। পানি কমতে শুরু করলে জিও ব্যাগ ডাম্পিংসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে ভাঙন প্রসঙ্গে বলেন, এ ভাঙনে ব্রিজ বা নদী রক্ষা বাঁধের ক্ষতির কোনো সম্ভাবনা নেই। নদীর চর ভাঙবে ও জাগবে এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আমরা এ বিষয়টি সব সময় নজরে রেখেছি। কোনো ধরনের সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : পাবনা লালনশাহ সেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh