প্রেমে সাড়া না দেওয়ায় স্কুলছাত্রীকে হত্যা

বরিশালের মুলাদীতে স্কুলছাত্রী আখিনুর আক্তারকে (১৪) চোখ উৎপাটন ও কুপিয়ে হত্যার জট খুলতে শুরু করেছে। প্রেমে সাড়া না দেওয়ায় কিশোরী স্কুলছাত্রীকে ফোন করে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। স্কুলছাত্রী হত্যার ঘটনায় সন্দেহজনকভাবে আটক তিনজনের কাছ থেকে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে মুলাদী থানার দায়িত্বশীল সূত্র।

তবে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে শুধু আটক তিনজনই নয়, বরং আরো কয়েকজন জড়িত রয়েছে বলেও নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। তবে অপরাধী যাতে পালিয়ে না যায় এবং তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম পরিচয় গোপন রেখেছে পুলিশ।

আজ শনিবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টায় মুঠোফোনে সাম্প্রতিক দেশকালকে এমনটাই জানিয়েছেন মুলাদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম মাকসুদুর রহমান। 

তিনি বলেন, ‘হত্যার মূল কারণ প্রেম। নিহত ছাত্রীর সাথে সর্বশেষ মোবাইল ফোনে যাদের কথা হয়েছে তাদের আটক করা হয়েছে। আমরা চাঞ্চল্যকর তথ্য পেতে শুরু করেছি। আশা করছি খুব দ্রুতই কিশোরী আখিনুর আক্তার হত্যার রহস্য বেরিয়ে আসবে এবং হত্যাকারীরাও গ্রেপ্তার হবে।

এদিকে নিহত আখিনুরের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী পুলিশ সদস্য জানিয়েছেন, ‘নিহতের দুই চোখ খুঁচিয়ে বের করে ফেলা হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। লাশের মাথায়, ঘাড়ে এবং নাকে ধারালো জখম রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে চাকু বা এমন সাদৃশ্য কোন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে-খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

নিহতের বাবা শাহে আলম জানিয়েছেন, এলাকার এক বখাটে আখিনুরকে দীর্ঘদিন ধরেই উত্যক্ত করে আসছিল। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে শালিসও হয়েছে। আখিনুর তার সাথে প্রেম না করলে ‘মার্ডার’ করে ফেলবে বলেও বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিত। কিন্তু বখাটে সেই যুবকের কথায় রাজি হননি আমার মেয়ে। এ কারণেই আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।

মুলাদী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সমীর কুমার দাস বলেন, একদিন নিখোঁজ ছিল আখিনুর। তিনি যেই বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল সেই বাড়ি থেকে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে বিকেল ৫টার দিকে রওয়ানা হয়। রাতে বাড়ি ফেরেনি। পরদিন লাশ পাওয়া যায়। লাশ যেখানে পাওয়া গেছে তার আশেপাশেই হত্যাকাণ্ডটি হয়েছে। ওই ছাত্রীর পারিবারের সাথে এলাকার তেমন কোনো বিরোধ ছিল না। ফলে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে প্রেম নিয়ে জটিলতায় এ ঘটনা ঘটেছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট আরেকটি সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত হত্যার প্রাথমিক যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে মোটামুটি নিশ্চিত প্রেমে রাজি না হওয়ায় প্রতিশোধ নিতে চাকু দিয়ে কুপিয়ে, চোখ উপরে হত্যা করা হয়েছে। হত্যায় পাঁচজনের মত সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে। মূলত ওই কিশোরী এলাকার মধ্যে তুলনামূলক সুন্দর হওয়ায় অনেকেই তাকে উত্যক্ত করতো। এ নিয়ে এলাকায় দুটি পক্ষের মধ্যে দূরত্ব তৈরী হয়। যে পক্ষকে একেবারেই পাত্তা দিতেন না তারাই এই ঘটনা ঘটাতে পারে। তবে পুলিশের তদন্তে আসল রহস্য উঠে আসবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

নিহত আখিনুর আক্তার মুলাদী উপজেলার গাছুয়া ইউনিয়নের পূর্ব হোসনাবাদ গ্রামের মো. শাহে আলম হাওলাদারের মেয়ে। স্থানীয় চরপৈক্ষা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। 

তার ভাই আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত ৩ আগস্ট সকালে পূর্ব হোসনাবাদ এলাকায় খালাতো বোন হালিমা বেগমের বাড়িতে যায় আখিনুর। বিকেল ৪টায় প্রাইভেট পড়তে সেখান থেকে বের হন। প্রাইভেট পড়ার পরে ওর বাড়িতে ফিরে আসার কথা। কিন্তু বাড়ি ফেরে না। পরের দিন খালাতো বোনের কাছ থেকে জানা যায় তিনি আগের দিনই চলে গেছে। এদিকে তরুণীর মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে থানায় আসেন স্বজনরা। তারা আখিনুরের মরদেহ দেখে শনাক্ত করেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //