করোনা প্রতিরোধক ভ্যাকসিনে অনাগ্রহী বরিশালের মানুষ

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে সরকার। সারাদেশের ন্যায় বরিশাল বিভাগেও ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ এবং বরিশাল সিটি করপোরেশন যৌথভাবে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

তবে ক্রমশই করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণের আগ্রহ কমছে বরিশালের মানুষের মাঝে। বিশেষ করে ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ নিতে আগ্রহী হচ্ছে না মানুষ। যার কারণে প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণকারীদের অর্ধেক মানুষও নেয়নি বুস্টার ডোজ। আবার নতুন ভ্যাকসিন গ্রহণকারীর সংখ্যাও শূন্যের ঘরে নেমে আসছে।

বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান এমনটিই ইঙ্গিত করছে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সিটি করপোরেশনসহ বিভাগের ছয় জেলায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধক প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন ৬৯ লাখ ৬৬ হাজার ৫৮২ জন। এছাড়া দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৬১ লাখ ৩৯ হাজার ৮৪২ জন। সে হিসেবে প্রথম ডোজ গ্রহণকারীদের মধ্যে ৮ লাখ ২৬ হাজার ৭৪০ জন গ্রহণ করেননি করোনা প্রতিরোধক ভ্যাকসিনর দ্বিতীয় ডোজ।

অপরদিকে, ‘২০২১ সালে দেশে শুরু হয় করোনার ভ্যাকসিনর তৃতীয় অর্থাৎ বুস্টার ডোজ প্রদান। গত বছরের নভেম্বরের পর থেকে এ বছরের চলতি মাস পর্যন্ত বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন মাত্র ২০ লাখ ৯৩ হাজার ৫৫৬ জন। স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব অনুযায়ী দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের মধ্যে ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ২৮৬ জন মানুষ গ্রহণ করেনি বুস্টার ডোজ।

এর মধ্যে বরিশাল জেলায় ১৯ লাখ ৭৬ হাজার ২২৪ জন প্রথম, ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৪৩৭ জন দ্বিতীয় এবং ৬ লাখ ৫১ হাজার ১৮ জন গ্রহণ করেছেন বুস্টার ডোজ। পটুয়াখালী জেলায় ১২ লাখ ৯২ হাজার ৬৬২ জন প্রথম, ১১ লাখ ৬৭ হাজার ৮৮৩ জন দ্বিতীয় এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন মাত্র ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৩৪১ হন।

ভোলা জেলায় প্রথম ডোজ ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬২৯ জন, দ্বিতীয় ডোজ ১২ লাখ ৩১ হাজার ৬৭৩ জন এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন মাত্র ২ লাখ ৮৬ হাজার ৬৮৯ জন। পিরোজপুর জেলায় প্রথম ৯ লাখ ৩০ হাজার ৯৯২ জন, দ্বিতীয় ডোজ ৮ লাখ ১০ হাজার ১৫৩ জন এবং বুস্টার ডোজ নিয়েছেন মাত্র ৩ লাখ ১ হাজার ৪০৫ জন।

বরগুনা জেলায় প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯৮ জন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৭ লাখ ২ হাজার ৬২৮ জন এবং বুস্টার ডোজ নিয়েছেন মাত্র ২ লাখ ৮০ হাজার ৪৫২ জন। এছাড়া ঝালকাঠি জেলায় প্রথম ৫ লাখ ১৩ হাজার ৬৭৭ জন, দ্বিতীয় ডোজ ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৬৮ জন এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন মাত্র এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৫১ জন।

এদিকে, স্বাস্থ্য বিভাগের গত ২৮ জুলাইয়ের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ‘বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা মোট ১২ লাখ ২৪ হাজার ১২০ জন। তাদের মধ্যে ভ্যাকসিন প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছে ১০ লাখ ৩৪ হাজার ২৫৩ জন। এছাড়া দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছে ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৩১ জন। সে হিসেবে এখনো এক লাখ ৯ হাজার ৮৬৭ জন শিক্ষার্থী ভ্যাকসিন গ্রহণ করেনি। আবার প্রথম ডোজ গ্রহণ করাদের মধ্যে ১ লাখ ৩৬ হাজার ২২২ জন শিক্ষার্থী গ্রহণ করেনি দ্বিতীয় ডোজ। শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের হার ৮৭ ভাগ।

অপরদিকে, ‘১৮ বছরের ঊর্ধ্বে বিভাগে ৫৮ লাখ ৬৬ হাজার ১৭৩ জনকে ভ্যাকসিন প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের। সেখানে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি অর্ধেকও। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ১৮ বছরের ওপরে লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি ৫৯ লাখ ৩০ হাজার ১৪৬ জন প্রথম ডোজ গ্রহণ করেন। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৫২ লাখ ৩৪ হাজার ৩৪ হাজার ৭২২ জন। দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেননি প্রথম ডোজ গ্রহণকারী ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৪২৪ জন। এছাড়া বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন মোট ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৫৯ জন। বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেননি দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করা ৩১ লাখ ৮২ হাজার ৯৬৩ জন।

এদিকে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণ বিশেষ করে বুস্টার ডোজ গ্রহণে মানুষের অনাগ্রহের সুনির্দিষ্ট কারণ জানা নেই স্বাস্থ্য বিভাগের। তবে ভ্যাকসিন নিয়ে ভ্রান্ত ধারনা এবং মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে যাওয়ায় মানুষ ভ্যাকসিনের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে বলে মনে করছেন ভ্যাকসিন কার্যক্রমের সাথে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //