ছয় দশক পর স্বপ্নপূরণ

বিদ্যুৎ পাচ্ছেন ১৩ পাহাড়ি গ্রামের মানুষ

ষাটের দশকে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে নির্মিত হয় কাপ্তাই বাঁধ। জলবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা হয়েছে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের। সে সময়টাতে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ভূমি তলিয়ে যাওয়ার পর প্রতিষ্ঠিত হয় ১৩টি গ্রাম।

তবে উদ্বাস্তু পরিবারদের কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি। অবশেষে ছয় দশক পর সেই কাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ পাচ্ছেন ১৩টি পাহাড়ি গ্রামের মানুষ।

স্থানীয় পাড়াবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের কারণে উদ্বাস্তু হন ওখানকার ১৩টি গ্রামের মানুষ। পরে তারা বিভিন্নভাবে ১৩টি গ্রামের মধ্যে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু এসব উদ্বাস্তু পরিবারকে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১০-১৫ কিলোমিটারের মধ্যে এই গ্রামগুলো। তবে দীর্ঘ ৬২ বছরের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ায় এখন খুশি তারা। এতে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, ঘরে ঘরে আলোর পাশাপাশি বৈদ্যুতিক পাখা, ফ্রিজসহ সকল যান্ত্রিক সুবিধা পেতে যাচ্ছেন তারা। আগে অনেকের ঘরে সৌরবিদ্যুৎ থাকলেও তখন সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যেত না।

বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় এসেছে বিলাইছড়ি পাড়া, মগবান, বনভান্তের স্মৃতি মন্দির এলাকা, মোরঘোনা, বড়াদম, জীবতলী, কামিলাছড়ি, হেরেটকাবাসহ আশপাশের ১৩টি গ্রামের অন্তত ছয় হাজারের অধিক মানুষ। 

স্থানীয় বড়াদম সুরবালা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক অরুণ কান্তি চাকমা জানান, দীর্ঘ ৬২ বছর পর আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলো। আপাতত মোরঘোনা, বড়াদম ও আশপাশের এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। অন্য গ্রামগুলোতে বৈদ্যুতিক তার-খুঁটির সংযোগ দেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসীরা এখনো মিটার কিংবা বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করেননি। সেজন্য সেসব গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে বাড়িতে সংযোগের জন্য আবেদন করলেই চালু করা হবে বলে শুনেছি।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিপি) অধীন ‘তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। 

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলার বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের ১৩ গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের এপ্রিলের দিকে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ১৪ লাখ টাকা। এই প্রকল্পের আওতাধীন ১৩ গ্রামের বাসিন্দারা বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছেন।

তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী উজ্জ্বল বড়ুয়া জানান, দেশের পার্বত্য অঞ্চল এলাকায় শতভাগ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসেবা নিশ্চিতে ২০১৭ সালের এপ্রিলে শুরু হয় তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প। ৫৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পে ১৬টি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও বিভিন্ন কেভির ১ হাজার ৯৫০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //