জিরাশাইলের চেয়েও লম্বা ধান আনলেন নূর মোহাম্মদ

বরেন্দ্র অঞ্চলের তীব্র খরায় প্রতি বছরই নষ্ট হতো ক্ষেতের ধান। কৃষকদের এই কষ্ট উপলব্ধি করে গবেষণায় এগিয়ে আসেন নূর মোহাম্মদ নামের এক কৃষক। সংকরায়ন ও নির্বাচনের মাধ্যমে উদ্ভাবন করেন নতুন নতুন কৌলিক সারির ধান। উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে বহুজাতের ধানের জিন সংমিশ্রণ করে একটি আধুনিক উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন তিনি।

এবার নূর মোহাম্মাদ এমন একটি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন যা চিকন ধান হিসেবে পরিচিত। এটি জিরাশাইলের চেয়েও লম্বা এবং চিকন। তবে লম্বা বেশি হওয়ায় জিরাশাইলের চেয়ে এর আকর্ষণ বেশি। 

বোরো মৌসুম ছাড়া জিরাশাইল ধানের ফলন ভালো না হলেও নূর মোহাম্মদ আউশের মৌসুমেই তার নতুন ধান ফলিয়ে দেখিয়েছেন। 

কৃষক নূর মোহাম্মদের বাড়ি তানোর উপজেলা সদরের গোল্লাপাড়ায়। অভাব-অনটনের কারণে পড়াশোনা বেশিদূর হয়নি। তবে ছোটবেলা থেকেই ধান নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন তিনি। তার জমিতে বছরের সব সময় থাকে গবেষণার ধান। 

বরেন্দ্র অঞ্চলে নূর মোহাম্মদ ‘স্বশিক্ষিত কৃষি বিজ্ঞানী’ হিসেবে পরিচিত। কৃষিখাতে অসামান্য অবদান রাখায় পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি কৃষি পদকও। বর্তমানে তাঁর জমিতে শতাধিক সারিতে ৩৯ ধরনের ধান নিয়ে গবেষণা হচ্ছে।

চলতি বছরের আউশ মৌসুমে আরও একটি নতুন কৌলিক সারি উদ্ভাবন করেছেন নূর মোহাম্মদ। সারিটির জীবনকাল ৯৫ দিন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর সারিটি কর্তন করা হয়। এসময় উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম, জুনিয়র পরিসংখ্যান সহকারী আখের হোসেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ডিএফএম ইমদাদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

ধানটি কাটার পর মাড়াই-ঝাড়াই শেষে শুকনো ওজনে হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ৯ মেট্রিক টন বা বিঘাপ্রতি ১৬ মণ ফলন পাওয়া যায়। চালের হিসাবে হেক্টরপ্রতি ফলন ৩ দশমিক ২৬ মেট্রিক টন। আউশ মৌসুমে এই ফলন জিরাশাইলের চেয়ে বেশি। পরে তারা ধানটির নামকরণ করেন ‘নূর ধান-৩’।

নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আউশ মৌসুমে জিরাশাইল ধানের উৎপাদন ভালো হয় না। তবে তার নতুন ধানটির উৎপাদন ভালো হবে। এই ধান চিকন, ভাত হবে ঝরঝরে। ভাত খেতেও ভালো। জমিতে এই ধানের গাছ হেলে পড়ে না। জিরাশাইলের মতই এই ধান চিকন হলেও লম্বা একটু বেশি। প্রায় আট বছর গবেষণার পর জাতটি উদ্ভাবন হয়েছে।’ 

প্রান্তিক এই গবেষক বলেন, ‘কম জমিতে অধিক ফলনশীল নতুন কৌলিক সারির ধান উদ্ভাবনে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আউশ-আমন ও বোরো মৌসুমে প্রায় দুই শতাধিক কৌলিক সারি উদ্ভাবন করেছি। উদ্ভাবিত এই সারিগুলো অধিক ফলনশীল, স্বল্প উৎপাদনকাল, সরু, চিকন, সুগন্ধিযুক্ত ও খরা সহিষ্ণু। পুষ্টি সম্পূর্ণ এবং প্রতিকূল আবহাওয়ায় চাষোপযোগী এসব ধান।’

এদিকে নতুন এই সারিগুলোর চাষাবাদ শুরু করেছেন স্থানীয় কৃষকেরা যা ধান উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় উপযোগী হওয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকেরা নূর মোহাম্মদের সারিগুলো চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন। বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে সারিগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। 

কৃষক নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘ধান গবেষণা ও নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং কৃষকদের মধ্যে তা ছড়িয়ে দিয়ে জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে অবদান রাখতে চাই আমি। গড়তে চাই সোনার বাংলাদেশ। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতাও প্রয়োজন আমার।’

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, ‘নূর মোহাম্মদ দীর্ঘ দিন ধরেই ধান নিয়ে গবেষণা করছেন। তার গবেষণা কতটুকু কার্যকর সেটা গবেষকেরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে আমরা উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে তার খোঁজখবর রাখি। আমাদের কৃষি কর্মকর্তারাও তাঁর প্লট নিয়মিত পরিদর্শন করছেন।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

বিষয় : খরা ধান কৃষি

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //