জামালপুরে বন্যা, তলিয়ে গেছে ফসলী জমি

জামালপুরে হঠাৎ বন্যা দেখা দিয়েছে। উজানের পাহাড়ি ঢলে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার অন্তত পাঁচ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

অকাল বন্যায় প্রায় একহাজার ১৯০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষক।

জেলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি কয়েকদিন ধরে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সদর উপজেলাসহ দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী উপজেলার নদীগুলো প্লাবিত হয়ে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। ফলে ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

মেলান্দহ উপজেলার কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আমন ধান, মরিচ, ভুট্টা, পেঁয়াজ, মাশকলাই ও বিভিন্ন ধরনের শাক ও সবজির ক্ষেত পানির নিচে। অনেক কৃষক ক্ষেতে যেন পানি না ঢুকতে পারে তার জন্য ক্ষেতের চারপাশে আইল তৈরি করে মাটি দিয়ে উঁচু করে দিচ্ছেন। এ পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে উঁচু জমিও তলিয়ে যাবে।

এ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের কান্দারপাড়া এলাকার কৃষক সেকান্দর আলী বলেন, আমার ৬০ বছর বয়সে এমন অসময়ে নদীর পানি কখনো বাড়তে দেখিনি। কয়েকদিন থেকে পানি বাড়ছে। পানি বাড়ায় ৭৭ শতাংশ ক্ষেতের ধান তলিয়ে গেছে। অনেক ক্ষতি হয়ে গেলো। আরেক ধান না আসা পর্যন্ত কীভাবে চলবো। না খেয়ে থাকতে হবে।

একই ইউনিয়নের শেখসাদি এলাকার আফরোজা বেগম বলেন, ২০ শতক জমিতে হাইব্রিড মরিচ চাষ করছিলাম। পানিতে তলিয়ে গেছে। একই এলাকার সখিনা বেগম জানান, আমার ধান ও মরিচ ক্ষেত মিলে ৩ বিঘা জমি তলিয়ে গেছে। ধান আর মরিচ থেকে যে উপার্জন হয় তা দিয়েই সংসার চলে। পানি নেমে যাবার পরে ওই ক্ষেতে কোনো ফসল করার মত উপায় এখন তো আর নেই।

কান্দারপাড়া এলাকার কৃষক হারুন মিয়া বলেন, কয়েক দিন ধরে হঠাৎ পানি বেড়ে ধানক্ষেত তলিয়ে গেছে। প্রতিদিনই অল্প অল্প করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ এলাকার প্রায় সবাই ধান ও মরিচ লাগিয়েছিল। আমার এক বিঘা আমন ধান ও মরিচ খেত তলিয়ে গেছে।


টুপকারচর এলাকার কৃষক নরুল ইসলাম বলেন, মরিচ ও পেঁয়াজের ক্ষেতে পানি ঢুকলে সেই ক্ষেত আর থাকে না। পানি ঢুকার সাথে সাথে মরিচা গাছ মরতে শুরু করে। পেঁয়াজ গাছ পচতে থাকে। সম্পূর্ণ ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানি নেমে গেল সম্পূর্ণ ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলার একহাজার ১৯০ হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সারা জেলায় আমন ধান ৭২১ হেক্টর, মরিচ ১৪৩ হেক্টর, পেঁয়াজ ২১ হেক্টর, ভুট্টা ১৭৫ হেক্টর, মাশকলাই ৭৭ হেক্টর, শাক-সবজি ৫৬ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে।

জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জাকিয়া সুলতানা বলেন, হঠাৎ করে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ৫টি উপজেলার নিন্ম অঞ্চলের এসব ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা যাবে বলে তিনি জানান।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টের পানি পরিমাপক আব্দুল মান্নান বলেন, কয়েকদিন অব্যাহত পানি বেড়েছে। তবে ইতোমধ্যেই যমুনার পানি কমতে শুরু করেছে। বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //