সুবর্ণচরে ব্রি-৭৫ ধানে চিটা, ক্ষতির মুখে কৃষক

প্রতিবছর আমন মৌসুমে আমন ধান আবাদ করে পুরো সংসারের চাহিদা পূরণ করে আসছিলেন কৃষক সাহাব উদ্দিন। এবার তিনি ধার- দেনা করে ও স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এক একর বর্গা জমিতে কৃষি অধিদপ্তরের বীজ সহযোগিতায় ব্রি- ৭৫ জাতের উচ্চ ফলনশীল ধানের চাষ করেছেন।

উপজেলার পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামের কৃষক সাহাব উদ্দিন, নেপাল চন্দ্র মজুমদার, চর আমানউল্লাহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ছানা উল্যাহ, কৃষক সাহাব মিয়া ও মো.আক্তার হোসেনের ব্রি- ৭৫ জাতের ধান চিটা হয়ে গেছে।

সুবর্ণচর কৃষি অফিস জানায়, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে এবার চলতি আমন মৌসুমে ৩৮ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে। বিভিন্ন জাতের মধ্যে ২১টি জাতের ধানের আবাদ হয়েছে সুবর্ণচরে। এর মধ্যে ১৮ হেক্টর জমিতে ব্রি- ৭৫ জাতের ধান চাষে কয়েক হেক্টর জমির আবাদে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষক। 

জানা যায়, ২১ জাতের মধ্যে ব্রি-৭৫ জাতের ধানের আবাদে বেশির ভাগই চিটা হয়ে গেছে। উপকূলীয় জনপদে আমনের ওপরই নির্ভর করে থাকে হাজারো কৃষক। আমন মৌসুমে এই বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে চরম হতাশায় ভুগছেন ব্রি- ৭৫ জাতের ধান চাষিরা। বিষয়টি উপজেলা কৃষি অফিসে জানালেও তারা কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বরং কৃষকের চাষপদ্ধতিকে দুষলেন। 

কৃষকরা বলেন, এ ধান চাষে তাদের কোনো প্রশিক্ষণ বা চাষপদ্ধতি জানানো হয়নি। এ ছাড়াও উপজেলার বেশিরভাগ কৃষকের অভিযোগ- প্রকৃত কৃষক প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা পায় না।

উপজেলার চর আমান উল্যাহ ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আক্তার হোসেন জানান, প্রতিবছর আমার জমিতে অন্য ধান আবাদ করতাম; কিন্তু এবার আরও ভালো ফলনের আশায় নতুন জাতের ব্রি- ৭৫ ধান আবাদ করেছি। আমার ৩.৫০ একর জমির সব ধানের শীষে চিটা দেখে ধান ভাঙিয়ে আবার সে জমিতে দেশি জাতের আমন ধান চাষ করেছি। এতেও কোনো লাভ হয়নি। চাষের সময় চলে যাওয়ায় এ জমিতে আর ধান হচ্ছে না। এক জমিতে দুইবার চাষ করে আমার ৫০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। 

কৃষক সমন্বয়ে গঠিত (সিআইজি) সমিতির সভাপতি মো. ছানা উল্যাহ জানান, উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্রি-৭৫ ধানের বীজ প্রদান করলে ১ একর জমিতে এ ধানের চাষ করি। চাষ করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ধানের শীষ বের হলেও তাতে কোনো রেনু দেখা যায়নি। ফলে পুরো জমির ধানের সব শীষ চিটা হয়ে গেছে। চাষের মৌসুম শেষ হওয়ায় এ জমিতে পুনরায় ধান লাগানোর সুযোগ নেই। পরিবারের একমাত্র নির্ভরতার ফসল না তুলতে পেরে বড় ধরনের লোকশানের মুখোমুখি হচ্ছি। 

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, আমাদের কিছু করার নেই। উপজেলায় এবার চলতি আমন মৌসুমে ৩৮ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে ২১ জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে। সুবর্ণচরে প্রথমবারের মতো ১৮ হেক্টর জমিতে ব্রি- ৭৫ জাতের ধান আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩ হেক্টর জমির ধানের শীষ চিটা হতে পারে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন। কৃষকের চাষ পদ্ধতি না জানার কারণে অনেক সময় চিটা হতে পারে। সে বিষয়ে কৃষকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //