খেজুর রস সংগ্রহে আগাম প্রস্তুতিতে ব্যস্ত গাছীরা

‘খেজুর গাছে চোমর বের হয়েছে তোরে এনে দেব, সন্ধ্যা রস ঝেড়ে এনে ঝাউ রেন্দে খাবো, ঠিলে ধুয়ে দে বউ গাছ কাটতে যাব’- বাংলার গ্রাম পল্লীতে এখনো এ লোককথা প্রচলিত। শীত পুরোপুরি না নামলেও আগে ভাগেই শুরু হয়ে গেছে খেজুর গাছ তোলা ও ঝোড়ার কাজ। শীতের আগমনী বার্তায় ঝিনাইদহের গাছীরা এখন মহা ব্যস্ত। আগামী ৪ মাস একনাগারে চলবে এ কর্মযোগ্য। 

ঝিনাইদহ কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর ১৫ হাজার ৭৫২ জন গাছি ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় গাছ কাটা শুরু করেছে।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাকরি গ্রামের আব্দুল মজিদ জানান, ৫০ বছর ধরে খেজুরের গাছ কেটে বছরে ৬মাস সংসার চালান। এবারো তিনি শুরু করেছেন ১০০টিরও বেশি খেজুরের গাছ তোলার কাজে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছুটে চলেছেন গাছ কাটায়। নিয়মিতভাবে খেজুরের গাছের সংখ্যা কমলেও গ্রামের একমাত্র গাছী হিসেবে তার কদর কমেনি।

তিনি জানান, ১০ ঠিলে রস থেকে এক ঠিলে গুড় হয়। একটি গাছ থেকে এক সিজনে প্রায় ১২০-১৪০ ঠিলে রস আহরণ সম্ভব। ভোরে যেমন রসের কদর আছে ঠিক তেমনি গুড়ের কদরও কম না। এক ঠিলে রস ১০ টাকা করে গ্লাস ধরলেও ১০০ টাকার উপর আয় হয়। অন্যদিকে এক কেজি গুড়ের দাম প্রায় ১২০-১৩০ টাকা। এখন বর্তমানে এক ঠিলে গুড় বিক্রি হয় হাজার বারোশ টাকায়। সংসারটা এ সময় ভালেই চলে।

জানা যায়, তার মতোই গ্রামে গ্রামে চলছে গাছ কাটা বা গাছ তোলার ধুম। দা ধার দেওয়া, ঠিলে ও নলি তৈরি করা আরো কতো কী। হবেনা কেন? আগামী ৪ মাস যে এ গাছগুলোই তাদের রুজি-রুটি।

ঝিনাইদহ কোটচাঁদপুরের গাছী আব্দুল কাদের জানান, গ্রাম বাংলার সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক এ খাতে সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় বর্তমানে ঝুকির মধ্যে পড়েছে এ পেশা।

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ডিডি আজগর আলী জানান, মধু বৃক্ষ থেকে সংগ্রহ হবে খেজুর রস। তাতে তৈরি হয় নলেন গুড় ও পাটালী।

তিনি আরো জানান, এ বছর ১ লাখ ১৪ হাজার খেজুর গাছ কাটা হবে ঝিনাইদহে। জেলায় রস উৎপাদানের টার্গেট রয়েছে ৫৭ লাখ ৮৭ হাজার ৮০০ লিটার। চিনির থেকে খেজুরের রস বা গুড় অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত।