ছাড়িয়েছে আমনের লক্ষ্যমাত্রা, খাদ্যে স্বস্তি

দেশের শস্যভাণ্ডার বলে পরিচিত রংপুর বিভাগ। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। সারাবিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে এবার জেলার মানুষের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত প্রায় তিন লাখ মেট্রিক টনের বেশি আমন ধানের চাল বিভিন্ন জেলার খাদ্য চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে বলে আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

কৃষকরা বলছেন, চড়া সুদে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বেশি দামে সার-ডিজেল ও সেচসহ ধান চাষে অতিরিক্ত টাকা খরচ হয়েছে। বাজারে যে দামে ধান-চাল বিক্রি হচ্ছে তাতে উৎপাদন খরচ উঠবে না। এমনকি সরকার ধান-চালের যে দাম নির্ধারণ করেছে তাতে পোষাবে না কৃষকদের।

কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি কর্মকর্তারা সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে না কিনে বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান-চাল কেনায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। ফলে ন্যায্যমূল্য পান না তারা। প্রতি বছর কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে ব্যবসায়ীরা চাল বানিয়ে সরকারি খাদ্যগুদামে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। অথচ কৃষকরা ধান বিক্রি করতে গেলে খাদ্য কর্মকর্তারা নানা অজুহাত দেখান। ওসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ফলে এবারও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে চলতি আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল এক লাখ ৬৬ হাজার ৬৩৬ হেক্টর জমি। সেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ধান চাষ হয়েছে এক লাখ ৬৬ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। 

গতকাল মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) পর্যন্ত জেলার আট উপজেলায় ২৬ শতাংশ ধান কাটা ও মাড়াই শেষ হয়েছে। এতে প্রতি হেক্টরে সাড়ে পাঁচ মেট্রিক টন করে ধান এবং সাড়ে তিন টনের বেশি চাল পাওয়া গেছে। সে হিসাবে এবার চাল উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে চার লাখ ৮৩ হাজার মেট্রিক টনের বেশি। 

স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানিয়েছেন, বৈরী আবহাওয়া বিশেষ করে বৃষ্টি কম হওয়ায় সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে জমিতে পানি দিতে হয়েছে। জমি তৈরি, চারা রোপণ এবং বেশি দামে সার কিনে জমিতে দিয়েছেন কৃষকরা। প্রতিকূল অবস্থা সত্ত্বেও ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রংপুর জেলার মানুষের চালের চাহিদা আছে প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন। সেখানে চাল উৎপাদন হবে প্রায় পাঁচ লাখ মেট্রিক টনের কাছাকাছি। ফলে জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায় প্রায় তিন লাখ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মাড়াইয়ের পরপরই যদি কৃষকের কাছ থেকে খাদ্য বিভাগ সরাসরি ধান কিনতো তাহলে কৃষকরা লাভবান হতেন। খাদ্য বিভাগ ঘোষণা দেওয়ার কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও সরাসরি ধান কিনছে না। ফলে ক্ষুদ্র চাষিরা দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ শোধ করতে ধান কাটার পরই বিক্রি করতে বাধ্য হন। এ সুযোগে বড় ব্যবসায়ীরা কম দামে ধান কেনেন। ফলে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পান না।’

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‌‘এবার অন্যান্য জেলার চেয়ে রংপুরে আমনে ফলন অসম্ভব ভালো হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। জেলার খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে প্রায় তিন লাখ মেট্রিক টন চাল অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা যাবে।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন ও করোনা মহামারির মধ্যে খাদ্য সংকটের শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন রংপুরের কৃষকরা। এতে খাদ্য ঘাটতি মেটাতে অনেকটাই সক্ষম হবো আমরা। আমনের পর ইরি-বোরো মৌসুমেও আশানুরূপ ধান উৎপাদন করতে সক্ষম হবেন কৃষকরা। ফলে রংপুর অঞ্চলে খাদ্য সংকটের শঙ্কা নেই। আর কৃষকরা যেসব অভিযোগ করেছেন, আশা করছি ধান ও চালের ন্যায্যমূল্য পাবেন তারা। তারা যাতে ন্যায্যমূল্য পান সেটি আমরা নিশ্চিত করবো।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //